এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে, স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট ভারত এবং বৃটিশদের শাসন, শোষন, নির্যাতন থেকে বাঁচতে সাধারন জনগনের আন্দোলনের মুখে পাকিস্থান নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। ১ম স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা ছিলেন, পাকিস্থানের জনক ব্যারিষ্টার কা-য়ে-দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্থানের শাসন, শোষন, নির্যাতন থেকে বাঁচতে সাধারন জনগনের আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ নামক পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্থানের মানচিত্র এবং জনগন ঠিকই রয়ে গেলেন। শুধু পূর্ব পাকিস্থানের পরিবর্তে বিশের মানচিত্রে বাংলাদেশ সন্নিবেশীত হল। সেই আন্দোলনের নেতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। শ্লোগান ছিল “ভোট এবং ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার।” জনাব শেখ মুজিবুর রহমান কথা দিয়ে কথা রাখেননি। তাহার নেতৃত্বে “বাংলাদেশ” নামক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রের চরিত্র কিন্তু পূর্বের আদলে বহাল তবিয়তে ছিল। রাষ্ট্রের জনগন কিন্তু আজও বসবাস করিতেছে সেই ভুখন্ডে। ৫ই আগষ্ট ২০২৪ ইং সরকারের মাত্রাতিরিক্ত নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি ৩য় স্বাধীনতা বা বিপ্লবের ডাক দেন সাধারন ছাত্র-জনতা এবং নেতৃত্বে ছিলেন আবাবিলরা। কিন্তু ছাত্র জনতাকে মনে রাখতে হবে, তাহাদেরকে সব ধরনের শক্তির যোগানদাতা বি.এন.পি এর নেতৃত্বাধীন সমমনাদলগুলো। অনেক শহীদের বিনিময়ে তৃত্বীয়বার জনগন স্বাধীনতা লাভ করেছে। পরোক্ষভাবে বলা যায়, ভারতের সাথে যুদ্ধ করে এবার প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এবারের স্বাধীনতার একক কোন নেতা নেই। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ভারত বা পাকিস্থান তাদের শাসন,শোষন, নির্যাতন থেকে মুক্তির লক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২০২৪ এর স্বাধীনতা বা বিপ্লবের ধরন ভিন্ন। বিপ্লবী বা অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারের মূল কাজ রাষ্ট্রকে সংস্কার করা। সংস্কার বলতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে এক বিভাগ অন্য বিভাগের উপর খবরদারী বা প্রভাব খাটাতে পারবে না। আইন বিভাগ রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আইন প্রনয়ন করবে। বিচার বিভাগ সাধারন জনগনের বিচারপ্রাপ্তিকে সহজীকরন করবেন। শাসন বিভাগ রাষ্ট্রের সাধারন জনগনের স্বার্থ বজায় রেখে দেশ শাসন করিবেন। ২০২৪ সনের পূর্বের যত সরকার ক্ষমতায় এসেছেন, অহেতুক অন্য বিভাগের উপর শাসন বিভাগ খবরদারী করার কারনে অন্যায় অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছে। এসব খবরদারী করা চলবে না। ছাত্র জনতার রক্তকে সর্বোচ্ছ অগ্রাধীকার দিয়ে দেশ শাসন করতে হবে। প্রভু না ভেবে বাস্তবিক অর্থে সেবক হওয়ার মনমানসিকতা নিয়ে চলতে হবে। আইন বিভাগ রাষ্ট্রের সর্বোচ্ছ গুরুত্বপূর্ন বিভাগ হিসাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে রাজনৈতিক দল সমূহকে। কাল টাকার মালিকদের কোন আবস্থাতেই নমিনেশন দেওয়া যাবে না। যাকে প্রার্থী দেওয়া হউক না কেন তাহার শিক্ষাগত যোগ্যতা, চারিত্রিক গুনাবলী, সত্যকে সত্য বলার সাহস থাকতে হবে। তোষামোদ কারীদের বর্জন করতে হবে। জ্বি-হুজুরদের বয়কট করতে হবে। কারন এ বিভাগের মাধ্যমে প্রনীত আইন দ্বারা বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগ পরিচালিত হতে হয়। এখানে দুবৃত্ত বা কাল টাকার মালিকদের নমিনেশন দিলে প্রথমে সাধারন জনগনের বিশ্বাস জন্মে দলীয় নীতি নির্ধারকদের প্রতি বিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয়। অনেকে কঠাক্ষ করে প্রার্থীকে অসম্মানজনক ভাবে কতিপয় নেতা নেত্রীকে গরুর হাটের মত ক্রয় করে নমিনেশন নিয়ে এসেছে। এ সন্দেহের তীর থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এ নেতিবাচক চিন্তাধারা থেকে বের হতে হবে। বর্তমানে সময়ের আমজনতা অত্যন্ত সচেতন। জনবান্ধব রাজনীতিবিদদের নমিনেশন দিতে হবে। পেশী শক্তি ও গ্রুপ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ঘৃনাভাবে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
বিশের ইতিহাসে এই প্রথম আইন সভার ৩৫০ জন সদস্য ও সরকার প্রধান তাহাদের কৃতকর্মের কারনে কেহ আত্মগোপনে, কেহ কারাগারে, কেহ বিদেশে, কেহ অবৈধ পথে দেশ ত্যাগ করতে গিয়ে যত্রতত্র মৃত্যুবরন করতে হচ্ছে। তাদের অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়, চোর, ডাকাত ঘোষ খোর, দুর্নিতিবাজরা হিসাবে তাহারা নিজেই দোষ স্বীকার করে নিচ্ছেন। যেহেতু অপকর্মের সাথে জড়িত, সেহেতু সাধারন জনগনের গনধুলাই বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে পাগলের মত দিক-বিদিক ছুটাছুটি করিতেছেন। নিকটাত্মীয়রা আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে না। ছেলে সন্তান, স্ত্রী সহ এসব নিন্দিত কাজের জন্য ঘৃনা করিতেছে। তাছাড়া রাষ্ট্রের সরকারী কর্মকর্তারা হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধ পথে আয় করে ভোগ করার সুযোগ পাইতেছে না। চোরের মত পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব ঘৃনিত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্ছ শাস্তি বা ক্যাপিটাল পানিশম্যান্ট বা মৃত্যুদন্ড দিলে বাংলাদেশ কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই সোনার বাংলাদেশ বা ইউরোপ আমেরিকার অর্তনীতির সাথে তাল মিলিয়ে চলবে। সাধারন জনগন কিন্তু কোন অন্যায়ের সাথে জড়িত নহে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাহারা কেমন আইন প্রনেতা চান? স্মরন করিয়ে দিতে চাই, Health is lost, something is lost, money is lost, nothing is lost, character is lost, Everything is lost। পলাতক দুর্নিতিবাজদের উত্তারাধীকারীগন তাহাদের অবৈধপথে উপার্জিত সম্পদ কেহ ভোগ করিবে না। তাছাড়া তাহাদের উত্তারাধীকারীগন সমাজে সবচেয়ে ঘৃনিত, ধিকৃত, অবহেলিত হয়ে তিলে তিলে আত্মহত্যার পথ বেছে নিবে। সুতরাং রাজনৈতিক দুবৃত্ত বা কাল টাকার মালিকদের নমিনেশন দিবেন না। আদর্শ জনবান্ধব নেতাদের নমিনেশন দিবেন। আমরা চুরি, ডাকাতি, ঘোষ দুর্নিতি ইত্যাদি করা ভাল নহে জানি, কিন্তু মানি না। ২০২৪ এর বিপ্লব দেখে যদি না মানেন তাহলে বলার কিছু নেই। ২০২৪ সালের কথিত নেতা নেত্রিরা পলাতক। তাহাদের পলাতক থাকার মধ্যে স্বার্থকতা আছে। কারন রন্দ্রে রন্দ্রে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করে পলাতক জীবন-যাপন করিতেছেন। কিন্তু দুঃখ লাগে তিন চার শতাংশ লোকের জন্য নিরীহ নিষ্পাপ ক্ষমতার ধারে কাছেও ছিলেন না। তাহারা আজ মামলার আসামী হয়ে পলাতক জীবন-যাপন করিতেছেন। তাদের অপরাধ প্রভাবশালী নেতাদের অবৈধ কার্যক্রমের প্রতিবাদ না করে, তোষামোদে ব্যতি-ব্যস্ত ছিলেন। ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করেছেন, শেখ হাসিনা, ওবায়েদুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, হাসান মাহমুদ ও তাহাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। আসামী হচ্ছেন, এসব নেতা নেত্রীদের কার্যক্রমকে সমর্থন করার কারনে সাধারন আওয়ামীলীগদের নেতা কর্মী আসামী। আমলাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি শহীদুল ইসলাম, বেনজির আহমদ, চৌধুরী মামুন আবদুল্লাহ, আসাদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, হারুনুর রশিদ, বিপ্লব কুমার প্রমুখ। তাদের অধিনস্তদের অপরাধ হলো, এসব দুর্নিতিবাজদের আদেশ-নিষেধ পালন করা। বিচার অঙ্গনকে কলুষিত করেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক, সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক প্রমুখ। এই দুই ব্যক্তির কারনে, শেখ হাসিনা তথা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দিশেহারা। বি. এন.পি এর নেতৃত্বাধীন ফেসিস্ট নির্যাতিত দল সমূহকে বলব, এমন কথা নেতা নেত্রীদের মুখ থেকে উচ্চারিত না হয়, যাহার দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কেহ আঘাতপ্রাপ্ত না হয় । গ্রামার এনে মাঠের বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে ব্যাখ্যার প্রয়োজন না হয়। সমমনা দলগুলোকে বলব, নিজেদের আদর্শ মাঠে ময়দানে জনগনের নিকট উপস্থাপন করুন। যেসব আদর্শ ভোটের মাধ্যমে জনগন গ্রহন করবে সেই রায়কে শ্রদ্ধা ভরে মেনে নেওয়াই গনতন্ত্রের মূল মন্ত্র।
জনাব, ড: ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকারের বিকল্প সরকার বাংলাদেশে হয়ত আর জীবনে নাও আসতে পারে। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী ড: ইউনুস সরকার গঠন করেছে। সুতরাং সরকারের চলাফেরা ভিন্ন আদলের হবে নিশ্চয়ই। যৌক্তিক সময় ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এর ত্রæটিসমূহকে স্থায়ী সমাধান করুন। প্রত্যেকটি উপজেলায় মটিবেশন মিটিংয়ের উদ্যোগ গ্রহন করুন। সাধারন জনগনকে বুঝাতে হবে শুধু প্রশাসনিক সংস্কার হলে চলবে না, সাধারন জনগন ও রাজনৈতিক দল সমূহের সংস্কার বেশী প্রয়োজন। তবেই দেশ সঠিক পথে পরিচালিত হতে বাধ্য। দুষীদের বিচার কিন্তু ট্রাইবুনালে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার সম্পূর্ন করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের নজির থাকতে হবে। ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কোন আপীল চলবে না। দন্ড বাস্তবায়নই সঠিক পথে চলার অন্যতম মাধ্যম। রাষ্ট্রের দুর্বলতা কোথায়, তা কিন্তু অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা খুচিয়ে, খুচিয়ে বের করতে জানে। এসব কাজ বাস্তবায়ন করতে হলে: ড: কনক সরওয়ার, ড: পিনাকি ভট্টাচার্য, জিল্লুর রহমান, খালেদ মহিউদ্দিন, মুসফিকুল ফজল আনসারী, ইলিয়াস আলী তাদেরকে দায়িত্বশীল পদে পদায়ন করা সময়ের দাবী। স্মরন করিয়ে দিতে চাই, এই মুহুর্তে বাংলাদেশে ছাত্রদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ তাদের কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই জনপ্রিয়তা কমে যায়। কারন ছাত্রদের চাওয়া বেশী কিন্তু ক্ষমতা সীমিত।
লেখক: সভাপতি, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বিয়ানীবাজার, সিলেট। মোবাইল: ০১৮১৯-১৭৬২১৭।
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.