প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৬ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

সেহরীতে বরকত রয়েছে -আজিজ ইবনে গণি

admin
প্রকাশিত মে ১১, ২০২০, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ
সেহরীতে বরকত রয়েছে -আজিজ ইবনে গণি

ক্ষণিকের মুসাফির কবি মনোয়ার হায়দার সেহরী নিয়ে এভাবেই ছড়া কাটলেন-

সেহেরী খেয়ে রোজা রাখবো
কী আনন্দ তাতে,
বে-রোজাদার এই আনন্দ
পায় কি নাস্তা ভাতে?

খুশি মনে পালন করবো
খোদারই বিধান,
পরকালে দিবেন প্রভূ
তারই প্রতিদান।

সত্যি, সেহরী খাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। যে রোজা রাখে না, সে এ আনন্দ বুঝবে কিভাবে ? সেহরী তো শুধু রোজাদারদের জন্যই। রোজা রাখতে হলে সেহরী খেতে হয়। ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত সেহরী খাওয়ার সুন্দর সময়। কেউ কেউ ১২টা ১টার দিকে সেহরী খেয়ে নেন। এবং ঘুমিয়ে পড়েন। রাতে আর জাগেন না। এটা সেহরী খাওয়ার সুন্দর পন্থা নয়। নবীর সুন্নত হচ্ছে, রাতে তারাবিহ নামাজ পড়ে ঘুমাতে যাবেন। তারপর সুবহে সাদেকের সময় জেগে উঠে সেহরী খাবেন।

আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, রাছুল সা. বলেছেন –

“তোমরা সেহরী খাবে। সেহরীতে বরকত রয়েছে।”
(বোখারী, মুসলিম)

আমরা সেহরী খেয়ে রোজা রাখবো, এটাই নবীর সুন্নত। সেহরীতে বরকত রয়েছে। আমরা এ বরকত থেকে বঞ্চিত হবো কেন ?

মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে, সেহরী খেতে খুব ভালো লাগে। একটা আলাদা পরিবেশ যেন। দু’টা আড়াইটা হতেই মসজিদে মসজিদে মাইকে ঘুম থেকে জাগার আহ্বান শুরু হয়। দরুদ, ক্বোরআন তেলাওয়াত, গজল ইত্যাদি পাঠ করতে শোনা যায়। গভীর রাতের নিরবতা ভেঙে যায়। মানুষের কোলাহলে মনে হয় না আর, রাতটা যে এতো গভীর। বাড়ির সব মানুষ জেগে উঠে। ছোট বাচ্চারাও আর ঘুমিয়ে থাকে না। পাশের ঘরের কেউ না জাগলে, ডেকে-ডুকে জাগিয়ে দেওয়া হয়।তারপর পরিবারের সবাই মিলে, টেবিলে একসাথে বসে সেহরী খাওয়া শুরু হয়। সেহরী খাওয়ার জন্য স্পেশিয়াল কিছু রান্না করার দরকার সেই। তৌফিক অনুযায়ী যার যার আছে, তা দিয়ে সেহরী খাওয়া যায়। সেহরীর জন্য অতিরিক্ত খরচ অপচয়ের সমান। আর অপচয়কারীকে আল্লাহ কখনো পছন্দ করেন না। একটা খেজুর দানা খেয়ে একগ্লাস পানি খেলেই সেহরী হয়ে যায়। আমরা কি আর তা করতে পারি ? ব্যাংক ভরা টাকা আছে, তাই লোক দেখানো সেহরী খেতে আমরা খুব অভ্যস্ত। বড়লোকী ভাব দেখাই সব জায়গায়। কিন্তু ইসলামে তা নেই। প্রয়োজনের বাইরে কোন কিছু করা মানেই অপচয়। অপব্যয়। কাজেই সেহরী খেতে সাবধান হওয়া দরকার। অনেকেই তো রোজা রাখছে, না খেয়ে। অনেকেই তো অন্যসময়ে তিনবেলা, দু’বেলাই থাকছে উপোস। তাই এসব বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। আমি যে লোক দেখানো সেহরী করবো, তাতে অন্যের মনে কষ্ট লাগবে কি না। সেহরীর জন্য মোটা রুই মাছ যে ঝুলিয়ে নিয়ে আসবেন, তা মোটেই ঠিক নয়। আপনার অবস্থা ভালো, আপনি খাবেনই, খান। তবে সব গোপনে।

আমরা সেহরী খেয়ে তবেই রোজা রাখবো। এর আগে পাশের ঘরের দিকে তাকাবো। তাদের চুলোয় আগুন জ্বলেছে কি না। যদি না জ্বলে, তবে তার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব কি আপনার নয় ? যদি তাই করেন, তবেই আপনার সেহরী সফল, তবেই আপনার রোজা স্বার্থক। কারণ, রোজা রাখাই হয়, এসব মানুষের কষ্টটা অনুধাবনের জন্য। গরীব মানুষ, অসহায় মানুষ, দুখি মানুষ…… কিভাবে না খেয়ে দিন গোজরান করে, তা উপলব্ধির জন্যই মহান আল্লাহ রোজা ফরজ করেছেন। তাই এ মাসে, তাদের কথা চিন্তা করতে হবে। তাদের দুঃখ, কষ্টকে নিজের করে নিতে হবে। এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে যতটুকু সম্ভব সেহরী খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

সেহরী না খেয়েও অনেকে রোজা রাখেন। ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বলে অনেকেই মধ্যরাতে আর জাগেন না। কিন্তু সেহরী খাওয়া ভালো। এতে শুধু পেটের ক্ষুধা নিবারণ নয়, অনেক বরকতও রয়েছে। এ কথা আমার নয়, স্বয়ং নবী করিম স. বলেছেন। তাই যারা সেহরী খান না, তাদের সেহরী খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাতেই মিলবে অনেক বরকত, নেয়ামত। আমরা যেন দয়াময় মহান আল্লাহর এ মহা অনুগ্রহ থেকে দূরে সরে না যাই, বঞ্চিত না হই।

সংবাদটি শেয়ার করুন।

    No feed items found.