স্টাফ রিপোর্টার:
পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলার ৬ নং আসামি কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন সিপন আটক হয়েও ছাড়া পেয়েছেন। এ ঘটনায় সিলেটের সাংবাদিকরা হবিগঞ্জ জেলার এসপি রেজাউল হক খান ও মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুনের উপর ক্ষুব্ধ। বুধবার সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি করেছিলেন তুরাবের সহকর্মী সিলেটের সাংবাদিকরা। কিন্তু অপসারণ তো হন-ই-নি; বরং পদোন্নতি পেয়েছেন হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার রেজাউল হক খান।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) পদে (গ্রেড-৪) পদোন্নতি পেয়েছেন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৪৭ জন কর্মকর্তা। এর মধ্যে একজন হবিগঞ্জের এসপি রেজাউল হক।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে হবিগঞ্জের মাধবপুরের গোপীনাথপুর গ্রামে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করতে গিয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি মঈন উদ্দিন শিপনকে (৪৩) গ্রেফতার করেছিলো টাস্কফোর্স। তবে তার কাছে অবৈধ অস্ত্র রক্ষিত আছে এমন কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি ১৯ জুলাই সিলেটে পুলিশের গুলিতে দৈনিক নয়াদিগন্ত ও জালালাবাদের রিপোর্টার এ টি এম তুরাব হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি।
মঈন উদ্দিন গোপীনাথপুর (মাস্টারবাড়ি) গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি ৫ আগস্ট পর্যন্ত সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। এর আগে ছিলেন সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ওসি। সিলেটে ১৯ জুলাই পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার দুপুরে বার্তা দেয়া হয়েছিল। তবে পরে আরেকটি চিঠি ইস্যু করে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত ডিএসবি প্রধান) রেজাউল হক খান জানান, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৫৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন (হবিগঞ্জ) এর সহকারি পরিচালক মো. ইয়ার হোসেন জানতে পারেন, জেলার মাধবপুর থানার গোপিনাথপুর মাস্টার বাড়ি মনতলা গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এ সংবাদের প্রেক্ষিতে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেন। এসময় টাস্কফোর্স কর্তৃক অবৈধ অস্ত্র জব্দ করার প্রয়োজনীয়তা থাকায় মনতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের রাত্রীকালীন টহল দলের সহযোগিতা নেন তিনি।
মো. ইয়ার হোসেন ১৪ জন বিজিবি সদস্যের টিম নিয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মনতলা গ্রামের মঈন উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। তবে অভিযানকালে সে বাড়িতে কোনো প্রকার অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়নি। পরে মঈন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি সুনামগঞ্জ জেলা হতে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (নং-০৫/২০২২- জগন্নাথপুর) গ্রহণ করলেও এ লাইসেন্সের বিপরীতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করেননি। তার নামে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি বৈধ কি না এবং উক্ত লাইসেন্সের বিপরীতে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে কি না তা যাচাই করতে তাকে নিয়ে বিজিবি দল মাধবপুর থানায় যান। পরবর্তীতে মাধবপুর থানায় রক্ষিত বেসরকারি আগ্নেয়াস্ত্র রেজিস্টার যাচাই করে মঈন উদ্দিনের নামে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার হেফাজতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়।
হবিগঞ্জ জেলা সুপার সেদিন জানান- তিনি (মঈন) একজন পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদ মর্যাদার কর্মকর্তা। এ অবস্থায় পুলিশ পরিদর্শক মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিজিবি কর্মকর্তা মো. ইয়ার হোসেনের কোনো অভিযোগ না থাকায় সোমবার বেলা ১১টার দিকে তাকে বাড়ি চলে যেতে দেয়া হয়।
এদিকে, ছাত্র আন্দোলনের সময় সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর পরও আবার তার কাছে অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়নি মর্মে বার্তা দিয়ে ওসি মঈন উদ্দিনকে ছেড়ে দেওয়ায় সিলেটের সাংবাদিক সমাজের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তুরাব হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ও সাবেক ওসি মঈনকে ছেড়ে দেওয়ার প্রতিবাদে সিলেটের সংবাদকর্মীরা বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মহানগরের শাহজালাল উপশহরস্থ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় সাংবাদিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বক্তৃতায় বলেন- অবিলম্বে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) ও মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)-কে অপসারণ এবং কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি মঈনসহ তুরাব হত্যার আসামিদের গ্রেফতার করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে পুলিশের গুলিতে সিলেটে সাংবাদিক নিহতের ঘটনা এই প্রথম। এই ঘটনায় আমরা হতভম্ব, বিস্মিত ও গভীর শোকাহত এবং সেই সাথে ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় সাংবাদিক তুরাবের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৯ আগস্ট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি নেই। উপরন্তু এ মামলার ৬ নং আসামি ঘটনার সময়ের সিলেট কোতোয়ালী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঈন উদ্দিন সিপনকে তার বাড়িতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখার অভিযোগে গত রোববার দিবাগত রাতে বিজিবি আটক করেছিলো। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও পরদিন দুপুরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এতে আমরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছি। পাশাপাশি তুরাব হত্যাকাণ্ডে জড়িত এসএমপি’র সাবেক কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ ও গোলাম কাওসার দস্তগীরসহ সকল আসামিকে অবিলম্বে গ্রেফতারের জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে সিলেটের সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচির ডাক দিতে বাধ্য হবেন।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। ঘটনার এক মাস পর নিহতের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে ১৯ আগস্ট সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।
মামলার ২ নম্বর আসামি হলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩ নম্বর আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪ নম্বর আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান ও ৬ নাম্বার আসামি সে সময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন।
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.