প্রজন্ম ডেস্ক:
শেখ হাসিনার দেড় দশকের শাসনামলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক ‘সোনালি অধ্যায়’ হিসেবে দেখেছে দুই দেশের সরকার। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে একধরনের অচলাবস্থা দেখা দেয়। এখন সম্পর্ক সচল করতে বিভিন্ন উপায়ে সক্রিয় হয়েছে ভারত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। মোদি এ ক্ষেত্রে ভারতের বৈশ্বিক মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সহযোগিতা চেয়েছেন। অন্যদিকে তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় সোমবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। আর আজ মঙ্গলবার নিউইয়র্কে ড. ইউনূসের সঙ্গে বসবেন বাইডেন।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, জয়শঙ্কর ও তৌহিদের আলাপ দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েই হবে, এটা নিশ্চিত। আর ইউনূস ও বাইডেনের আঞ্চলিক বিষয়ে আলাপের সময় ভারতের প্রসঙ্গ আনাটা অস্বাভাবিক হবে না। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে উন্নত করতে হলে আগে আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ভারতের দায়িত্বই বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সচল করার নানামুখী উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের সিনিয়র ফেলো মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বলেন, আস্থা প্রতিষ্ঠার নতুন ও সৃষ্টিশীল উদ্যোগ গ্রহণ উভয় পক্ষের জন্য দরকার।
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, আস্থা প্রতিষ্ঠা করা গেলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেখানে তাঁর অবস্থান করাটা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম, খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে কমপক্ষে ১৫০টি মামলা হয়েছে। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার কথাও বলছেন সরকারের উপদেষ্টারা।
স্থানীয় কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, শেখ হাসিনার কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারকে ভারত নিজের স্বার্থে টানা সমর্থন দিয়েছে। এতে বাংলাদেশে বেশির ভাগ মানুষ ভারতবিরোধী মনোভাব দেখাচ্ছে। আর শুধু বাংলাদেশ নয়, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপালসহ সব প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষায় ভারত ব্যর্থ হয়েছে। পুরো দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে ভারতের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব বিরাজ করার বিষয়টি বুঝতে পেরে দেশটি এখন সম্পর্ক উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করতে পারে।
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, আস্থার সংকট কাটানো শুরু করতে সীমান্ত হত্যা ও মাদক চোরাচালান বন্ধ করাসহ কিছু ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে ভারতকে নিতে হবে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারতকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় অস্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে দায়ী করার পুরোনো অবস্থান নতুন করে টেনে আনা থেকে বিরত থাকতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি থাকলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্থিতিশীল থাকবে না, এটা ভারতকে বুঝতে হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে আস্থায় নিয়ে কী করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাখাইনসহ পুরো অঞ্চল স্থিতিশীল ও শান্ত রাখা যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ভারত কী ভাবছে
নয়াদিল্লির এক কূটনীতিক বলেন, হাসিনার পতনের পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক নিশ্চল হয়ে আছে। সম্পর্ক সচল করতে নানামুখী তৎপরতার কথা স্বীকার করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলাপের পাশাপাশি ঢাকায় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন।
বাংলাদেশে দ্রুত স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসাটাও দরকার মনে করছেন ভারতীয়রা। তাঁদের ভাষ্য, দীর্ঘ সীমান্তের কারণে এখানকার স্থিতিশীলতা ও পরিবেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
ভারতের ভিসা সেবা প্রসঙ্গে এক কূটনীতিক বলেন, চিকিৎসা ও ইউরোপের দেশগুলোর শিক্ষা ভিসার জন্য যাঁরা ভারতে যেতে চান, তাঁদের জন্য এখন সীমিত আকারে ভিসার ব্যবস্থা চালু আছে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়তে যেতে চান এমন প্রকৃত শিক্ষার্থীদের ডাবল এন্ট্রি ভিসা দেওয়া হচ্ছে, এমন দাবি করে এক কূটনীতিক বলেন, ইউরোপের অনেক দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি হয়েছে দাবি করা অনেক শিক্ষার্থীর কাগজপত্র ভুয়া পাওয়া যায়। তাঁদের ভিসা দেওয়া হয় না।
ভারতীয়রা মনে করছেন, ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেনজেন অঞ্চলের কয়েকটি দেশের দূতাবাস আছে। এই দূতাবাসগুলো যেসব দেশের দূতাবাস নেই, তাদের হয়ে কর্মী ও শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি ভিসা দেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারে।
বাংলাদেশে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের ভারতীয় কর্মীদের বেশির ভাগ ৫ আগস্টের পর চলে গেছেন। এ বিষয়ে ভারতীয়রা বলছেন, এখানে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় নয়। সেনাবাহিনীকে এখনো হাইকমিশনের পাহারায় রাখতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে ভারতীয় কর্মীদের ফেরার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে।
ইলিশ কূটনীতি
দুর্গাপূজা সামনে রেখে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ মাছ রপ্তানির জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অনুমতি দিয়েছে। সারা দেশে যখন ভারতবিরোধী হাওয়া বইছে, তখন এমন অনুমতি দেওয়াকে একটি অনুকূল ও সাহসী পদক্ষেপ মনে করছেন দুই দেশের দুই কূটনীতিক।
বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি কী
হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা রোববার বৈঠক করেছেন বিএনপির সঙ্গে। বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের অন্যতম ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে বৈঠকটি হয়েছে ভারতীয় হাইকমিশনের আগ্রহে।
নিতাই রায়ের ভাষ্য, জনগণের ধারণা, ভারত ১৫ বছর ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এতে মানুষ ভারতবিরোধী হয়ে গেছে। এখন ভারতের দায়িত্ব এ ধারণা ভাঙা।
বিএনপি নেতা বলেন, ভারত মনে করছে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ সহজ হবে। এ কারণে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা শুরু হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
বিএনপি কী চায়, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হাইকমিশনারকে বলা হয়েছে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অর্থনীতি ও মানুষের স্বার্থ—এ বিষয়গুলো ঠিক রেখে দল ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়।
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.