
অমিত রায় চৌধুরী: নির্বাচনী ইশতেহারেই দুর্নীতির প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্সে’র অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ঘিরে কিছু ভিন্ন স্বর শোনা গেলেও যে বিষয়ে কোনো সংশয় ছিল না তা হল বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, জনপ্রিয়তা আর দেশের বদলে যাওয়ার চমকে দেয়া সাফল্য। হয়তো অত্যুক্তি হবে না, সমসাময়িক বাংলাদেশে তো নয়ই, অদূর ভবিষ্যতেও তার নেতৃত্বের কোনো বিকল্প অন্তত এখনও নজরে আসছে না। কিন্তু এতসব ইতিবাচক রূপান্তরের গল্পগাথাও জনমানসে স্বস্তি আনে না, যদি কিনা এ উন্নয়ন টেকসই না হয় বা অগ্রগতির ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
দেশের রাজনীতিমনস্ক জনসাধারণ মনে করে, একটি আধুনিক সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হলে নাগরিকের সুষম বিকাশ বিঘ্নিত হয়। আর সে লক্ষ্য অর্জনের পথে দুর্নীতি সবচেয়ে বড় বাধা। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিশ্বাস করে, দেশের নেত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবেন এবং তারা সচেতন যে, সে লড়াই খুব সহজ হবে না। কারণ লড়াইয়ের মাঠ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ভীষণ প্রতিকূল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একদিকে বিপুল জনগোষ্ঠী এ উদ্যোগের পাশে দাঁড়িয়েছে; অন্যদিকে একটি শক্তিশালী কায়েমি স্বার্থচক্র এ উদ্যোগকে রুখে দিতে ভীষণভাবে মরিয়া। এমন প্রেক্ষাপটে দুর্নীতির বিপক্ষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার অপরিহার্যতা ক্রমাগত গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডায় পরিণত হতে যাচ্ছে।
পৃথিবীর বহু দেশেই দুর্নীতির উপদ্রব আছে। উন্নত, উন্নয়নশীল এমনকি সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোও দুর্নীতির এ সংক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। চীন, ভারত, কানাডা, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর- এসব দেশেও দুর্নীতির প্রসঙ্গ সমকালীন ভাবনায় একটা বড় জায়গা দখল করে রাখছে। বাংলাদেশেও দুর্নীতির ইতিহাস আছে। বঙ্গবন্ধু দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইয়ে নেমেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় মদদ পেতে শুরু করে। সমাজ ও অর্থনীতির কাঠামো বদলে যেতে থাকে। আসলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারি লুটেরা শ্রেণিই যে উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য বিভ্রান্তিকর কল্পকাহিনী তৈরি করে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল তা আজ স্পষ্ট।
সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়া দুর্নীতির আগ্রাসন শুধু যে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ঘটাচ্ছে তা নয়, দেশের অপার সম্ভাবনার দ্বারগুলোও একে একে রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম হচ্ছে; এ বিষয়ে দেশবাসী আজ মোটামুটি একমত এবং একই সঙ্গে উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রীয় সেবা খাতগুলো দুর্নীতির বড় আখড়ায় পরিণত হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে খানিকটা বেপরোয়াই মনে হয়। বিভিন্ন শক্তিশালী গোষ্ঠী এ চক্রে যুক্ত হয়ে পড়েছে। এখানে দলমত বিচার করতে গেলে জটিলতা বাড়বে; মূল সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে।
দুর্নীতির চরিত্র আজ অনেকখানি বদলে গেছে। ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল বা উপদল, বড়গোষ্ঠী বা ছোটগোষ্ঠী- সবার ভেতরই এক ধরনের সমঝোতা চলে। বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে এদের মাঝে হাট-বাজার, ঘাট-বন্দর, সেতু-কাউন্টার- সবকিছু বণ্টন হয়ে যায়। এভাবে দুর্নীতির বিস্তার পাকাপোক্ত হয়েছে, দুষ্টচক্র শক্তি সঞ্চয় করেছে। বিভিন্ন চাকরি, পোস্টিং, ঠিকাদারি বা অবৈধ যোগাযোগের জন্য ক্ষমতাসীন দলের নাম ব্যবহার করা হয় বটে তবে বেনিফিশিয়ারি এ গোষ্ঠীর আদর্শিক আনুগত্য দলের পক্ষে কখনও ছিল কিনা তা জানার প্রয়োজন কেউ মনে করেনি; বরং কার্যক্ষেত্রে উল্টোটা ঘটেছে।
দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের বদনাম হয়েছে, সুবিধা গেছে বিরোধী শিবিরে। অবশ্যই এ অবস্থার জন্য দায়ী শুধু দেশের ক্রমাবনতিশীল মূল্যবোধের অবক্ষয় নয়, সাংগঠনিক দিক থেকে সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষয়িষ্ণু প্রবণতা বা সাংগঠনিক স্থবিরতাও এক্ষেত্রে বড় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। এমন একটি ক্রান্তিলগ্নে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি কেন সাংগঠনিক দুর্বলতার মুখোমুখি হচ্ছে- তা অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে।
বাংলাদেশের ইলেক্ট্রোরাল ডেমোগ্রাফিটা বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সিংহভাগই তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা জনতার স্রোত; যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে, মুক্তিযুদ্ধ-বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি আবেগ আছে। শহরের চেয়ে গ্রামে, সবলের তুলনায় দুর্বলতর শ্রেণির মধ্যেই আওয়ামী লীগের সমর্থন বেশি। ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণের মাঝে, সংগঠনের অণুতে-পরমাণুতে। সেনাছাউনিতে জন্ম নেয়া দলগুলোর সঙ্গে এখানেই এদের চরিত্রগত তফাত। কর্তৃত্ব, ভোগ ও লোভের তাড়না এ দলের কর্মীদের মনোজগৎ দখল করলে শক্তি হারাবে দল, পথ হারাবে ভবিষ্যৎ। অপরদিকে বিরোধী শিবিরটি কার্যত কয়েকটি বিভক্ত মতের মিশ্র স্রোত; যার মূল রাজনীতি আওয়ামী লীগ বিরোধিতা। এদের বড় একটি অংশ মুসলিম লীগের ভাবধারায় বেড়ে ওঠা।
অন্য অংশটি সমাজতন্ত্রের কথা বলে, অনবরত ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে; কিন্তু আচরণে তীব্র আদর্শিক বৈপরীত্য ধরা পড়ে। পরিবর্তিত সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাত্যহিক চর্চায় নব্য এ ধারার চেতনাগত অসাধুতা বা কপটতা সমাজে দুর্নীতি বিস্তারে পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছে বলে মনে হয়। বিদেশ কিংবা ঘরোয়া- সবখানেই তাদের নীতিগত অস্বচ্ছতা প্রকট হয়ে ধরা দেয়। সমাজতন্ত্র, উদার বহুত্ব বা গণতন্ত্র- কোনো ক্ষেত্রেই তাদের অবস্থান স্থান-কাল-পাত্রভেদে স্থির থাকে না। চীন, ভারত, পাকিস্তান বা আমেরিকার বৈদেশিক নীতি আগ্রাসী না বন্ধুত্বপূর্ণ অথবা অভ্যন্তরীণ নীতি ঘৃণাপ্রবণ না অন্তর্ভুক্তিমূলক কিংবা ধর্মাশ্রয়ী না ধর্মনিরপেক্ষ তা বিশ্লেষণে তাদের পক্ষপাত ও কৌশল অবলীলায় ধরা পড়ে।
সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে অনেককেই মঞ্চে সোচ্চার থাকতে দেখা গেলেও হংকং, তাইওয়ান, তিব্বত, উইঘুর, রোহিঙ্গা এমনকি চীন, ভারত বা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নীতি বা পৃথকভাবে তাদের অধিকৃত কাশ্মীর নীতি বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে দ্বিচারিতা লক্ষ করা যায়। পদ্মা সেতু, সীমান্ত চুক্তি, রোহিঙ্গা ইস্যু- কোনো বিষয়ই আমরা স্বার্থনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে অভ্যস্ত নই। তবুও দেশের জনগণ যে কোনো দল বা তার আদর্শকে পছন্দ করতে পারে বা নিজের মতো করে একটি যুক্তির শৃঙ্খল তৈরিও করতে পারে- এতে অসুবিধা নেই। সমস্যা তখনই আসে যখন আমরা একটি দলে দুর্নীতি দেখি, সুশাসনের অভাব দেখি- অন্য ক্ষেত্রে সেটি দেখি না।
আমরা পনেরো আগস্ট, একুশ আগস্ট, জজমিয়া নাটক, সংখ্যালঘু নিপীড়ন, কিবরিয়া-ইমাম-আহসানউল্লাহ মাস্টার-মমতাজ উদ্দীন বা এমন আরও অনেক সজ্জন মানুষের নির্মম হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনার বিষয়ে মুখ খুলি না; অথবা অনন্যোপায় হলে দু’দলকে সমান করে ন্যারেটিভ তৈরি করি, যা কখনই বুদ্ধিবৃত্তিক সততার পরিচয় বহন করে না। বলাই যায়, এর ফলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, দুর্নীতিবাজ বা অপরাধীরা সুবিধাই পেয়ে যায়।
দেশের নেতা ঘোষণা করেছেন, দলের ভেতর থেকে তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে চান। দুর্নীতির সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত তারা কোনোভাবেই ছাড় পাবে না। এমনকি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি তার পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়ও হন তবুও তিনি রেহাই পাবেন না। এমন হুশিয়ারি বাংলাদেশে এর আগে খুব একটা শোনা যায়নি। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শতভাগ সফল হতে যাচ্ছে- এমন ধরে নেয়ারও সুযোগ কম। কারণ একাধিক। প্রথমত, দুর্নীতির বিস্তৃতি সমাজের অনেক গভীরে ছড়িয়েছে। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতাসীন দলের একাংশ এ অনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। বিরোধীদের একটি অংশ এর প্রত্যক্ষ বেনিফিশিয়ারি।
তৃতীয়ত, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের একটা বড় অংশ এ অন্যায় চর্চার সঙ্গে যুক্ত। চতুর্থত, দেশের কম-বেশি সব রাজনৈতিক দল, প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, এনজিও এ দুর্নীতির উপকারভোগীতে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা যখন জনস্বার্থে দেশের বৃহত্তর কল্যাণে কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেই নির্দেশনাকে সেই দলের কর্মীরা একটা সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করবেন- এমন প্রত্যাশাই স্বাভাবিক। কিন্তু হতাশাজনক বাস্তবতা এই যে, নেতাকে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হচ্ছে একা। সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মুখ থেকে ঔদ্ধত্যমূলক কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে; যা খুবই অনাকাক্সিক্ষত। সংগঠনের যে দুর্বলতা এখন প্রকট হয়ে ধরা পড়ছে- তার নেপথ্য কারণ উদঘাটন হওয়া জরুরি।
একটি আধুনিক সমাজে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অনুশীলন অব্যাহত রাখা বিকাশমান একটি রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর রাখা দেশের সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো ও সাধারণ মানুষের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। সার্বভৌম রাষ্ট্রের মালিক জনগণ তার মতামতের যথার্থ প্রতিফলন ঘটাতে পারে এমন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খুব কম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে যা প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। এটি অগ্রসরমান একটি সমাজের জন্য সম্মানজনক নয়। এ অবস্থা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। ’৭৫-এ জাতির জনকের হত্যাকাণ্ড, ইনডেমনিটি, বিত্ত ও পেশির ক্রমবর্ধমান দাপট, সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর বিকাশ সামাজিক ন্যায়ের ধারণাকেই সমূলে আঘাত করেছে। ফলে রাজনৈতিক দল থেকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সবকিছুরই ক্ষতি হয়ে গেছে।
সংগঠনে মেধার বদলে এসেছে পেশি ও অর্থের কদর। নেতাকর্মীদের মানস কাঠামোয় পরিবর্তন ঘটেছে। সেবা ও ত্যাগের জায়গা নিয়েছে কর্তৃত্ব ও ভোগলিপ্সা। ত্যাগী নেতাকর্মী ক্রমে ক্রমে দূরে সরেছে আর আমলাতন্ত্রের কাছে রাজনীতির অসহায় সমর্পণ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি কারও জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দলের অন্তর্গত আদর্শ, চেতনা ও পরম্পরাগত চর্চার যে ধারা তার সঙ্গে বিদ্যমান রাজনৈতিক প্রবণতা সংঘর্ষপূর্ণ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ দল থেকে শুদ্ধি অভিযানের ডাক দিয়েছেন। এর প্রতীকী তাৎপর্য গভীর। নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখে মত-পথের ঊর্ধ্বে উঠে সবার এ মহৎ উদ্যোগের পাশে দাঁড়ানো উচিত। জাতির এমন এক ক্রান্তিকালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে নেত্রীর এ আহ্বান গোটা সমাজকে একটা আত্ম-সমীক্ষণের সামনে দাঁড় করিয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যদি নাগরিক সমাজের মাঝে একটা ঐক্য গড়ে তোলা যায় তাহলে রাজনীতিতে মেধা, সততা ও সেবার মানসিকতা ফিরে আসার পরিবেশ তৈরি হবে। আর সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পরস্পরকে দোষারোপ না করে দুর্বৃত্তায়নের বৃত্তকে ভেঙে শুদ্ধাচারের অনুকূলে প্রবল জনমত গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ করে তুলতে হবে। দল ও প্রশাসনকে আলাদা করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে যাতে আরও বেশি জবাবদিহি ও স্বচ্ছ করা যায়, সে লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
দল-মত নির্বিশেষে কিছু অভিন্ন বিষয়ে সহমত পোষণের দুর্লভ সুযোগ এসেছে বলে মনে হয়। অতীতে বা সাম্প্রতিককালে সংঘটিত কোনো অপরাধই যেন দায়মুক্তি না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। হত্যা, লুট, সংখ্যালঘু নিপীড়ন, আর্থিক কেলেঙ্কারি অথবা সম্পদ পাচারে সম্পৃক্ত ব্যক্তি যেই হোক, তাকে দৃশ্যমান শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট, ৮৮-র ২৪ জানুয়ারির মতো বিরোধী পক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার বীভৎস, হিংস্র পথে ভবিষ্যতে যাতে কেউ পা বাড়াতে সাহস না পায় তার উপায় উদ্ভাবন করতে হবে। অন্যথায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অলীক কল্পনাই থেকে যাবে।
একের অস্তিত্ব যেন অন্যের বিনাশের কারণ না হয় তার গ্যারান্টি রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। আর ঐক্যমতের ভিত্তিতে অর্থ-পেশি-ক্ষমতার প্রভাব নিষ্ক্রিয় করে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে। পরাজিত হলে প্রত্যাখ্যানের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সবাইকে আন্তরিক হতে হবে, নিজে সম্পদের পাহাড় গড়ার কল্পনায় আচ্ছন্ন না থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবতে হবে, সমকালীন বিশ্বের যে চ্যালেঞ্জগুলো দেশকে মোকাবেলা করতে হবে, সে বিষয়ে তরুণদের প্রস্তুত করতে হবে। আর সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে জনগণের আরও একটি পুনর্জাগরণ ঘটাতে হবে যা সব ধরনের দুর্নীতি, অসততা ও অন্যায্যতা ভাসিয়ে নিয়ে যাবে ন্যায়ের প্রবল অভিঘাতে; এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
অমিত রায় চৌধুরী : সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ
সংবাদটি শেয়ার করুন।