এডভোকেট মোঃ আমান উদ্দিন:
শিক্ষাবিদ, বিদগ্ধ পন্ডিত, শতগ্রন্থের প্রণেতা অধ্যাপক আবু সাঈদ কে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে দাওয়াত পত্র নিয়ে গেলেন তৎকালীন ভি.সি জামিলুর রেজা চৌধুরী। দাওয়াত পত্র গ্রহন করলেন। কিন্তু জনাব চৌধুরীকে বললেন, আমি একজন সাধারন শিক্ষক। সর্বোচ্ছ মেধাবীদের অনুষ্ঠান। তাদের কর্মকান্ড বিশে^র সর্বত্র। তাহারা তো প্রত্যেকেই একেকজন একেকটি প্রতিষ্ঠান। এসব গুনিজনদের অনুষ্ঠানে কি বলব? সে ভাষা কি আমার জানা আছে ? এসব কথা জনাব চৌধুরীকে বললেন। তাও আবার প্রধান অতিথি। জনাব চৌধুরী অধ্যাপক আবু সাঈদকে আশ^স্থ করে বললেন, এমন কি গুন অর্জন করেছেন? অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির সকল সদস্যই আপনার জ্ঞান গর্ব বক্তব্য শুনতে চায়। স্যার বিনয়ের সাথে প্রকৌশলীদের নিকট শুরুতেই ভুল ত্রæটি, ক্ষমা' সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এ কথা বলে, বক্তৃতা শুরু করলেন। অনুষ্ঠানের মধ্যমনি গুনিজনদের মিলন মেলায় তুমুল করতালি। জ্ঞান গর্ব বক্তব্য শুনে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আহবান জানাতে লাগলেন বক্তৃতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। বক্তব্য শেষ হল। অনুষ্ঠানের বুড়োরা স্যারকে কদমবুচি সহ নানাবিদ সম্মানসূচক আচরন করলেন। অনুষ্ঠানের একজন সদস্য-ই স্যারের কিন্তু ছাত্র নহে। আজকের বক্তব্যের কারনে অনুষ্ঠানের ঘোষক সকলের পক্ষ থেকেই বলে ফেললেন, আজ থেকে কিন্তু আমরা সকলেই আপনার ছাত্র হয়ে গেলাম। বর্ণাঢ্য শিক্ষা জীবনের অধিকারী যদি শিক্ষবিদ হয়ে থাকেন, তাহলে যে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বলতে চাই, যত্রতত্র শিক্ষাবিদ কথাটি ব্যবহার না করার জন্য। জনাব আলী আহমদ স্যার ধ্যানে, জ্ঞানে, গুনে, সততায়, লোভ লালসা ও পারিবারিক ঐতিহ্যের উর্ধে থেকে শিক্ষকতা পেশাকে লালন ও পালন করে খ্যাতিমান শিক্ষক হয়েছেন। বৃহত্তর সিলেটের আদর্শবান শিক্ষকরা সকলে-ই তাঁহাকে সম্মানসূচক স্যার বলে ডাকেন। তিনি ছিলেন শিক্ষকদের নেতা। আপাদমস্তক শিক্ষকতার ছাপ বিদ্যমান। বিয়ানীবাজার উপজেলার আলোকবর্তিকা পি.এইচ. জি. সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২৭টি বৎসর। উপজেলা ও জেলা থেকে যখনই কোন উচ্চ পদস্ত কর্ম-কর্তা স্থানীয় প্রশাসনে যোগদান বা অতিথি হয়ে আসতেন। প্রথমে-ই পি. এইচ. জি. সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে স্যারের দোয়া নিয়ে কর্মকান্ড শুরু করতেন। এটা একটা অঘোষিত রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। আদর্শ-কে আমি- তুমি এবং সে এক-কথায় আমরা সকলেই শ্রদ্ধা করি। বর্তমানে- কি এ প্রথা চালু আছে? না, কোথাও নেই। স্যারের ঘরের লাইব্রেরী ভর্তি বই, খাতা, কলম। এসব বই পুস্তক পড়াশুনা করে অবসর সময় অতিবাহিত করেন। এসব পুস্তককে আলিংগন করে শিক্ষনীয় কিছু শিখতে পারলে কিভাবে সাধারন জনগনকে জানানো যায়, সে চেষ্টা তাঁহার মধ্যে বিদ্যমান। শিক্ষাবিদদের এমনটাই হওয়া উচিত। আলোকিত ও আদর্শ সমাজ বিনির্মানে এসব প্রবীন শিক্ষকদের শিক্ষনীয় পথ অনুসরন করিলে গোটা গুনেধরা সমাজ ব্যবস্থায় শৃংখলা ফিরে আসতে বাধ্য। অসংখ্য সুযোগ সুবিধা থাকা স্বত্তে¡ ও কখনোই এসব সুযোগ গ্রহন করেননি। বিবেককে সর্বোচ্ছ আদালত হিসাবে বেছে নিয়ে নিজে আদর্শবান থেকেছেন। অন্যকে আদর্শবান মানুষ গড়ায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করে চলেছেন। শুধু সনদদারী শিক্ষিত হলে আদর্শ মানুষ হওয়া যায়-না। সামাজিক শিক্ষা ও একাডেমিক শিক্ষার সমন্বয় হলে আদর্শ মানুষ হওয়া যায়। স্যারের মধ্যে উভয় গুনই বিদ্যমান। সুশীল সমাজে তাহার ব্যাপক পরিচিতি শিক্ষকদের আইডল। শিক্ষক সমাজ তাঁহাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যমনি করে সম্মান সূচক শব্দটি চয়ন করে "শিক্ষাবিদ উপাধী দিয়েছেন।"
ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে, কিভাবে সেতু বন্ধন করতেন আমি তাহার রাজ স্বাক্ষী। কর্মজীবনে স্যার ছিলেন প্রধান শিক্ষক। সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন জনাব মো: আব্দুর রহমান স্যার। উভয়ই অবসরে চলে গেলেন। মো: আব্দুর রহমান স্যার যখন অসুস্থ তখন আমাকে নিয়ে প্রায়ই আব্দুর রহমান স্যারকে দেখতে যেতেন। বলতেন, জনাব মো: আব্দুর রহমান স্যার কিন্তু আমার শিক্ষাজীবনের শিক্ষক। কর্মজীবনের ও অন্যতম সহকর্মী। তাঁহার পরামর্শে আমার পথ চলা। তাহার সান্নিধ্যে থেকেই আলী আহমদ হয়েছি। স্যারের বাল্যবন্ধুদের মধ্যে অন্যতম বন্ধু ছিলেন খাসা গ্রামের মোঃ মাহমুদ হাসান খান। পেশায় ছিলেন প্রকৌশলী। তাও আবার নির্বাহী প্রকৌশলী। যেখানে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সংস্থার জরীপে দুর্নিতির শির্ষে। সেই প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী প্রকৌশলী হয়েও তাঁহাকে দুর্নিতি নামক শব্দটি স্পর্শ করতে পারেনি। চাইলে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারতেন, কিন্তু করেননি। আদর্শকে বাচিয়ে রেখে অবসরে আবার দুই বন্ধুর দেখা হত' প্রায়ই। অতিথ-কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতেন। জনাব স্যারের উপদেশ, আদর্শ, সততা, ন্যায় নিষ্টতা, ধৈর্য্য, আত্মসমালোচনা, কল্যানকর কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণ, অসৎ লোভ-লালসার থেকে নিজেকে দমন করতে পারলেই জীবনে সুখী হবেই-হবে। ঘৃণা করতেন, অহংকার, অসৎ ব্যক্তি, অন্যের মন্দ সমালোচনাকারী নিন্দুক ব্যক্তিদের ঘৃণা কর এবং তাদের "সংগত্যাগ করে আদর্শ মানুষদের সাথে চলাফেরা করতে পারলেই জীবন সুখী ও শান্তিময় হবে অবশ্যই। জনৈক ব্যক্তি ভিজিটিং কার্ড আমাকে দিলেন। ভিজিটিং কার্ড পড়ে ঐ ব্যক্তিকে প্রশ্ন করলাম কার্ডকি আপনি নিজে না সৌজন্যে কেউ ছাপিয়ে দিয়েছে? জবাবে ঐ ব্যক্তি বললেন আমি নিজেই ছাপিয়েছি। সর্ব-সাধারনের অবগতির জন্য জানাতে চাই, ঐ ব্যক্তি নিজের কার্ডে নিজেই লিখেছেন, আল্লামা, মিষ্টভাষী বক্তা, কুকিল কন্ঠস্বর, টিভি ভাষ্যকার, ইসলামী স্কলার, লেখক, কলামিষ্ট, গভেষক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বক্তা, ও মুফাস্সিরে কোরআন ইত্যাদি। আপনারা বলুন তো, ঐ কার্ডদারি ব্যক্তিকে এক-কথায় কি পাগল বলা যায় না? অবশ্যই বলা যায়। হালের শিক্ষা ব্যবস্থায় এ ধরনের শিক্ষিতের সংখ্যাই বেশী।
লেখক: সভাপতি, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.