প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৬ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

রমজান: কাঁদছে বিয়ানীবাজারের মসজিদগুলো

admin
প্রকাশিত এপ্রিল ২৫, ২০২০, ০৯:০৮ পূর্বাহ্ণ
রমজান: কাঁদছে বিয়ানীবাজারের মসজিদগুলো

স্টাফ রিপোর্টার:

হাজী মনির আলী (৬০), জীবনের পড়ন্ত সময়ে। শৈশব থেকে কত চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বড় হলেও পবিত্র রমজান মাসের এমন চিত্র কখনো দেখেননি তিনি। কোথাও কোলাহল নেই, সেহরি আর তারাবির নামাজের সময়ও সবকিছু সুনশান।

রিনা বেগম (৫৫), রমজানকে বরাবরই পেয়েছেন ধর্মীয় উৎসবের আমেজে। রোজার চাঁদ দেখার জন্যও মনে যে আনন্দবোধ হতো, জানালেন- এবারে তা নেই।

মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন এক ফাঁলি চাঁদের জন্য। তারপর মসজিদে মসজিদে ঘোষণা হতো, ‘আহলান, সাহলান, মাহে রমজান।’ এই ঘোষণা যত দূর ভেসে যেত বাতাসে, আনন্দের বার্তাও ততদূরই পৌঁছে যেতো মুসলিম জনসাধরণের কানে কানে।

হাফিজ নুরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বললেন, ‘চাঁদ দেখার ঘোষণার পর পরই তারাবির নামাজের প্রস্তুতি নিতাম। মসজিদে তারাবির নামাজে প্রথম কাতারে গিয়ে শামিল হওয়ার জন্য তাড়না কাজ করতো। কিন্তু এবার যখন মসজিদ থেকে ভিন্নরকম ঘোষণা আসছিলো, মনে হচ্ছিলো বুকের ভেতরটা ধুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে।’ শুধু নুরুল ইসলামই নয়, বিয়ানীবাজারের অনেকেই জানালেন- এমন ধর্মীয় আবেগ-উচ্ছ্বাসহীন বিবর্ণ রমজান তাদের জীবনে আর আসেনি।

প্রাণনাশী করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবীজুড়ে নেমেছে গভীর শোকের ছায়া। সাধারণ জনজীবন আজ বিপন্ন অদৃশ্য এই ভাইরাসের ভয়ে। এখনো কোনো প্রতিষেধক বেরোয়নি কোভিড-১৯ দমনে। নেই কোনো চিকিৎসাও। বলা হচ্ছে, ঘরে থাকা আর শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ছাড়া করোনা থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই।

এই পরিস্থিতিতে সারা দেশের মতো বিয়ানীবাজারেও আজ মানুষ ঘরবন্দি হয়ে আছেন। উপজেলার প্রায় পৌনে ৩লাখ বাসিন্দা আজ চারদেয়ালের মাঝে দিনকে রাত করছে, রাতকে করছে দিন। বন্ধ করা হয়েছে সব জনসমাগম। মসজিদসহ ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতেও গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সেই সুবাদে রমজানের তারাবির নামাজ আদায়েও মুসল্লি সংখ্যা ঠিক করে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। ১২ জনের অধিক যাতে মসজিদে তারাবির নামাজে মুসল্লি না হন, সে বিষয়ে আছে কড়াকড়ি। তাই এবার বিয়ানীবাজারের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিকে তারাবির নামাজ পড়তে হচ্ছে ঘরে।

বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলার কয়েকটি মসজিদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। বিভিন্ন মসজিদে কমিটি সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ১২ জন মুসল্লি নিয়ে এশা-তারাবির নামাজ আদায় করা হয়েছে। আবার বিভিন্ন মসজিদে তারাবির জামাতই অনুষ্ঠিত হয়নি। এশার নামাজ জামাআতে পড়ার পর মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব মসজিদের মুসল্লিরা যার যার ঘরে গিয়ে তারাবিহর নামাজ আদায় করেছেন।

তবে অনেক এলাকায় বাড়ির বা পাড়ার লোকজন একত্র হয়ে ছোট ছোট জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। কেউ বা নিজের ঘরে আবার কারো উদ্যোগে বাড়ির ছাদেও নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন।

    No feed items found.