নিউজ ডেস্ক:
ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ড। শেনজেনভুক্ত দেশটির নানা অঙ্গন জুড়ে অসামান্য সমৃদ্ধি করবে ঘোষণা করে আসছে সর্বোচ্চ স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা। চলুন, সুইজারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় আবেদন প্রক্রিয়া, স্টুডেন্ট ভিসা ও অধ্যয়ন খরচ এবং স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কেন সুইজারল্যান্ড উচ্চশিক্ষার অন্যতম সেরা গন্তব্য
গ্লোবাল ইনোভেশন ইন্ডেক্স অনুসারে, একটানা ১৩ বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী দেশের মর্যাদা পেয়ে আসছে সুইজারল্যান্ড। এর নৈপথ্যে রয়েছে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবধর্মী গবেষণা ও সৃজনশীলতা চর্চা। কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে শীর্ষ ১০০-এর মধ্যে থাকা বিদ্যাপীঠগুলো হলো- ইটিএইচ জুরিখ (৭), ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল ডি লোস্যান (৩৬), এবং ইউনিভার্সিটি অফ জুরিখ (৯১)।
জীবনযাত্রা যথেষ্ট ব্যয়বহুল হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের অষ্টম শিক্ষার্থীবান্ধব শহরটি হচ্ছে সুইজারল্যান্ডের বৃহত্তম নগরী জুরিখ।
প্রতিবারের মতো ২০২৪-এ ও পৃথিবীর শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষ ১০-এ রয়েছে সুইজারল্যান্ড (৬)। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত জীবনযাত্রার দেশগুলোর মধ্যে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে সুইজারল্যান্ড।
এছাড়া পরিবেশের দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে এই স্থলবেষ্টিত দেশটি। মাত্র ২৩ দশমিক ৩ পলিউশন ইন্ডেক্স নিয়ে নিরাপদ রাষ্ট্রগুলোর তালিকায় ১০ নম্বরে রয়েছে সুইজারল্যান্ড।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম সম্প্রতি কার্বন নিঃসরণের প্রচেষ্টার ওপর মূল্যায়ন করে ১২০টি দেশের নাম প্রকাশ করেছে। এনার্জি ট্রাঞ্জিশনের ভিত্তিতে এই তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে সুইসরা।
সুইজারল্যান্ডের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধ্যয়নের সেরা বিষয়গুলো
বিশ্বজুড়ে বহুল সমাদৃত সুইজারল্যান্ডের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়:
* ইটিএইচ জুরিখ
* ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল ডি লোস্যান
* ইউনিভার্সিটি অব জুরিখ
* ইউনিভার্সিটি অব ব্যাসেল
* ইউনিভার্সিটি অব বার্ন
* ইউনিভার্সিটি অব জেনেভা
* ইউনিভার্সিটি অব লোস্যান
* ইউএসআই ইউনিভার্সিটি ডেলা স্ভিজ্জেরা ইটালিয়ানা
* ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট গ্যালেন
* ইউনিভার্সিটি অব ফ্রিবুর্গ
সুইস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নের সেরা বিষয়গুলো:
* হস্পিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট
* বিজনেস অ্যান্ড ফাইন্যান্স
* বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
* ইঞ্জিনিয়ারিং
* মেডিসিন অ্যান্ড হেল্থকেয়ার
* আইন
* অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিক্স
* সাংবাদিকতা
সুইজারল্যান্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
এখানে প্রধানত দুটি মৌসুমে ভর্তির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একটি হচ্ছে ফল ও অপরটি স্প্রিং। ফলের জন্য আবেদন গ্রহণ করা হয় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এরপর এই আবেদনগুলো যাচাইয়ের ভিত্তিতে ভর্তি শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে।
অপরদিকে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হয় স্প্রিং-এ, যার প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ হয় ফেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি শুরুর মাধ্যমে।
দুটো ভর্তি মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে ফল। কেননা এ সময় অন্য সময়ের তুলনায় আবেদনের জন্য বেশি সংখ্যক বিষয় পাওয়া যায়।
এই আবেদনগুলো কোনো কেন্দ্রীয় সিস্টেমের মাধ্যমে নেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীদের সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
* প্রার্থীর স্বহস্তে সই সম্পূর্ণ পূরণকৃত আবেদনপত্র
* দুটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি
* বৈধ পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি
* বিগত শিক্ষাগত যোগ্যতার সাপেক্ষে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট
* ব্যাচেলরের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল সনদ বা ডিপ্লোমা কিংবা তার সমতুল্য সনদ
* স্নাতকোত্তরের জন্য স্নাতক ডিগ্রি বা সমমানের সনদ
* পিএইচডি স্তরের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি বা সমতুল্য সনদ
* ভাষার দক্ষতা প্রমাণ স্বরূপ:
* আইইএলটিএস (সাধারণত ন্যূনতম স্কোর ৬ দশমিক ৫)
* টোফেল (আইবিটি) (সর্বনিম্ন স্কোর ৮০)
* পিটিই একাডেমিক (ন্যূনতম স্কোর ৫৮)
* সিভি
* আবেদন ফি প্রদানের প্রমাণ: সাধারণত ১০০ থেকে ১৫০ সুইস ফ্রাঙ্ক, যা প্রায় ১৪ হাজার ১১৩ থেকে ২১ হাজার ১৭০ টাকার (১ সুইস ফ্রাঙ্ক = ১৪১ দশমিক ১৩ বাংলাদেশি টাকা) সমান
* প্রার্থীর নিজের সম্পর্কে বিস্তারিত পার্সনাল স্টেটমেন্ট
* ডক্টরাল গবেষণার ক্ষেত্রে যার অধীনে গবেষণা করা হচ্ছে তার নিকট থেকে একটি স্বীকারক্তি চিঠির
সুইজারল্যান্ডে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন
সুইস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ মেয়াদে পড়াশোনার জন্য ডি টাইপ ভিসার আবেদন করতে হয়। এই ভিসা ক্যাটাগরিতে ৯০ দিন বা ৩ মাসের বেশি সময় সুইজারল্যান্ডে থাকার অনুমতি লাভ করা যায়। আবেদনপত্রসহ সমুদয় কাগজপত্র জমা প্রদানের জন্য সশরীরে সুইস দূতাবাসে উপস্থিত হতে হয়। সেখান থেকে নথিগুলো যাচাইয়ের জন্য সুইজারল্যান্ড ক্যান্টন অভিবাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
ভিসা ডি টাইপের মেয়াদ নির্বাচিত প্রোগ্রামের সময়কালের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে। যেমন স্নাতকের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৪ বছর এবং স্নাতকোত্তরের জন্য ২ থেকে ৬ বছর।
এই অনুমতির মধ্যে কিন্তু অন্যান্য সেনজেনভূক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের সুবিধা আওতাভূক্ত নয়। তার জন্য আলাদা করে শেনজেন ভিসা নিতে হবে, যার ক্যাটাগরি হচ্ছে সি টাইপ।
নিম্নের লিঙ্ক দুটোতে থাকা ফর্মের যেকোনোটিতে ভিসা ডি-এর জন্য আবেদন করা যাবে:
https://www.sem.admin.ch/dam/data/sem/einreise/visumantragsformulare/visumantrag-visumd-en-de.pdf
অথবা
https://www.sem.admin.ch/dam/data/sem/einreise/visumantragsformulare/visumantrag-visumd-fr-en.pdf
ভিসার যাবতীয় নথি জমা দিতে যাওয়ার পূর্বেই মেইলের (dhaka.visa@eda.admin.ch) মাধ্যমে দূতাবাসে সাক্ষাতের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে।
সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ঠিকানা: বে'স এজওয়াটার, অষ্টম তলা, প্লট ১২, নর্থ এভিনিউ, গুলশান ২, ঢাকা-১২১২।
ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
* আবেদনকারীর নিজ হাতে সই এবং সম্পূর্ণ পূরণকৃত ভিসা আবেদন ফর্ম
* ২টি সাম্প্রতিক (৬ মাসের কম পুরনো) পাসপোর্ট আকারের (৩৫ থেকে ৪০ মিলিমিটার) ছবি
* আগের সব পাসপোর্টের আসল কপি এবং বর্তমান বৈধ পাসপোর্টের ফটোকপি
* সিভি
* অধ্যয়নের পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা প্রদানপূর্বক একটি মোটিভেশন লেটার
* শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ (সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট)
* সুইস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির অফার লেটার
* পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে ফিরবেন- এই মর্মে আবেদনকারীর লিখিত ঘোষণাপত্র স্পন্সরের নিকট থেকে বিজনেস লেটারহেডে প্রস্তুতকৃত কভারিং লেটার, যেখানে উল্লেখ থাকবে যে তিনি শিক্ষার্থীর সুইজারল্যান্ডে অধ্যয়নের যাবতীয় খরচ বহন করবেন
* আবেদনকারী বা স্পন্সরের আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: (গত ১২ মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, আয়করের কাগজপত্র, ফিক্স্ড ডিপোজিট রশিদ ইত্যাদি) প্রতি শিক্ষাবর্ষে ২১ হাজার ১০০ ফ্রাঙ্ক বা ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬০ টাকা
* ঋণের মাধ্যমে সম্পদ দেখানো হলে, ব্যাংকের নিকট থেকে সেই ঋণ মঞ্জুরি পত্র
* টিউশন ফি প্রদানের প্রমাণ: ন্যূনতম ১ বছরের জন্য
* শিক্ষার্থী ভাষা দক্ষতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে- এই মর্মে সুইস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি নিশ্চিতকরণপত্র
* আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভাষা দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার সনদ: আইইএলটিএস/টোফেল/পিটিই
* প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যে নথি বা তথ্যাবলি চাওয়া হতে পারে, তা হলো:
* সুইজারল্যান্ডে শিক্ষার্থীর অগ্রিম আবাসন নিশ্চিতকরণ
* স্বাস্থ্য বিমা
* পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
* নথিগুলো যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ঠিক সেভাবেই ক্রমানুসারে সাজিয়ে এক সঙ্গে ক্লিপ করতে হবে (স্ট্যাপল করা যাবে না)। কাগজপত্রের ১ সেট আসল এবং ২ সেট ফটোকপি মিলে মোট ৩ সেট জমা দিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ মূল কাগজগুলো যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীকে ফেরত দেওয়া হবে।
স্টুডেন্ট ভিসা ফি এবং প্রক্রিয়াকরণের সময়
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সুইস স্টুডেন্ট ভিসা সম্পূর্ণ ফ্রি।
ভিসা প্রক্রিয়াকরণে সাধারণত প্রায় ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ সময় লাগে। তবে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এই সময়টি পরিবর্তিত হয়ে কয়েক মাস পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হতে পারে। তাই সুইজারল্যান্ড গমনের তারিখের অন্তত ৩ থেকে ৬ মাস আগে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। সেই সঙ্গে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ নথি নির্ভুল হওয়া এবং তথ্য পরিবেশনে যথাযথ স্বচ্ছতা প্রদর্শন করা অপরিহার্য।
রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন
ভিসা নিয়ে সুইজারল্যান্ড পৌঁছার প্রথম ১৪ দিনের মধ্যে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এই পারমিটের ওপর ভিত্তি করে পরে সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং বাসস্থান নির্ধারণসহ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে।
রেসিডেন্স পারমিট নিতে হবে শিক্ষার্থী যে শহরে থাকবেন সেখানকার স্থানীয় ক্যান্টন অভিবাসন অফিস থেকে। বিভিন্ন বিদেশি নাগরিকদের জন্য এই পারমিটের ক্যাটাগরি ভিন্ন হয়ে থাকে। সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা বি টাইপের জন্য আবেদন করবেন। পারমিটের মেয়াদ থাকে সাধারণত এক বছর এবং তারপর এটি পুনরায় নবায়ন করা যায়।
সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অধ্যয়নের বিষয় নির্বিশেষে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য প্রতি সেমিস্টারে খরচ হতে পারে গড়ে ৭৩০ থেকে ৯৫০ ফ্রাঙ্ক। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি ১ লাখ ৩ হাজার ২৬ থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ টাকার সমতূল্য।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর ও মাস্টার্সের জন্য বার্ষিক অধ্যয়ন ফি গড়ে ১ থেকে ২ হাজার ফ্রাঙ্ক (১ লাখ ৪১ হাজার ১৩১ থেকে ২ লাখ ৮২ হাজার ২৬২ টাকা)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ফি হতে পারে ১০ থেকে ২০ হাজার ফ্রাঙ্ক (১৪ লাখ ১১ হাজার ৩০৮ থেকে ২৮ লাখ ২২ হাজার ৬১৭ টাকা)।
পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য বাজেট রাখতে হবে (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে) ৫০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ফ্রাঙ্ক (৭০ হাজার ৫৬৫ থেকে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৫৭ টাকা)। একই ধরনের প্রোগ্রামের ব্যয়ভার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৫ থেকে ১০ হাজার ফ্রাঙ্ক-এ বা ৭ লাখ ৫ হাজার ৬৫৪ থেকে ১৪ লাখ ১১ হাজার ৩০৮ টাকা।
জীবনযাত্রার খরচের নিরীখে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ সুইজারল্যান্ড। অবশ্য দেশটির বিভিন্ন শহরে এই বাজেটের তারতম্য ঘটে। সবচেয়ে দামী শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে জুরিখ ও জেনেভা। অন্যদিকে বার্ন ও লোসান-এ জীবনযাত্রার খরচ মোটামুটি সাশ্রয়ী।
লিপস্কলার (ভারতীয় ওভারসিজ এডুকেশন কন্সাল্টেন্স) এবং নাম্বিও (ওয়ার্ল্ড স্ট্যাট্স ডাটাবেজ) অনুসারে, প্রধান সুইস শহরগুলোতে গড়পড়তায় মাসিক জীবনযাত্রার খরচ নিম্নরূপ:
* জুরিখ: ৩ হাজার ৭১০ ফ্রাঙ্ক (৫ লাখ ২৩ হাজার ৫৯৫ টাকা)
* জেনেভা: ৩ হাজার ৫৮৮ ফ্রাঙ্ক (৫ লাখ ৬ হাজার ৩৭৭ টাকা)
* ব্যাসেল: ৩ হাজার ২৯৬ ফ্রাঙ্ক (৪ লাখ ৬৫ হাজার ১৬৭ টাকা)
* বার্ন: ২ হাজার ৯৪২ ফ্রাঙ্ক (৪ লাখ ১৫ হাজার ২০৭ টাকা)
* লোসান: ৩ হাজার ৮০ ফ্রাঙ্ক (৪ লাখ ৩৪ হাজার ৬৮৩ টাকা)
লিপস্কলার এবং নাম্বিও তথ্যমতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে উপাদানগুলো এই জীবনযাত্রার আওতাভুক্ত থাকে, সেগুলো হলো:
* যাতায়াত খরচ (মাসিক পাস): ৮০ ফ্রাঙ্ক বা ১১ হাজার ২৯০ টাকা
* (বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস) ইউটিলিটি খরচ: ২৩৫ ফ্রাঙ্ক বা ৩৩ হাজার ১৬৬ টাকা
* মোবাইল ফোন বিল: ৪৮ ফ্রাঙ্ক বা ৬ হাজার ৭৭৪ টাকা
* ইন্টারনেট বিল: ৪৯ ফ্রাঙ্ক বা ৬ হাজার ৯১৫ টাকা
* খাবার খরচ: ২০০ থেকে ৫০০ ফ্রাঙ্ক (২৮ হাজার ২২৬ থেকে ৭০ হাজার ৫৬৫ টাকা)
* স্বাস্থ্যসেবা: ২০০ থেকে ৪০০ ফ্রাঙ্ক (২৮ হাজার ২২৬ থেকে ৫৬ হাজার ৪৫২ টাকা)
* স্টুডেন্ট ভিসার আওতায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য বিমায় প্রাথমিক পর্যায়ে মাসিক ভিত্তিতে কমপক্ষে ১০০ ফ্রাঙ্ক (১৪ হাজার ১১৩ টাকা) ছাড় পেয়ে থাকে।
সুইজারল্যান্ডে স্কলারশিপের সুবিধা
বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ, অনুদান এবং আর্থিক সহায়তা হিসেবে সুইস সরকার প্রতি বছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক বরাদ্দ রাখে।
লিপস্কলারে তথ্যমতে, এগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ স্কলারশিপগুলোর সাধারণ মূল্যমান নিম্নরূপ:
* সুইস গভর্নমেন্ট এক্সিলেন্স স্কলারশিপ: সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১ লাখ ১১ হাজার ফ্রাঙ্ক (১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৫ হাজার ৫২৩ টাকা) পর্যন্ত
* ইটিএইচ জুরিখ এক্সিলেন্স স্কলারশিপ: প্রতি সেমিস্টারে ১২ হাজার ফ্রাঙ্ক (১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৫৭০ টাকা)
* জেনেভা ইউনিভার্সিটি এক্সিলেন্স মাস্টার ফেলোশিপ: প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ হাজার ফ্রাঙ্ক (১৪ লাখ ১১ হাজার ৩০৮ থেকে ২১ লাখ ১৬ হাজার ৯৬৩ টাকা)
* ইউনিভার্সিটি অব লুসান মাস্টার্স গ্রান্ট্স: প্রতি মাসে ১ হাজার ৬০০ ফ্রাঙ্ক (২ লাখ ২৫ হাজার ৮০৯ টাকা)
* ইপিএফএল এক্সিলেন্স ফেলোশিপ: প্রতি সেমিস্টারে ১০ হাজার ফ্রাঙ্ক বা ১৪ লাখ ১১ হাজার ৩০৮ টাকা
* গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট জেনেভা স্কলারশিপ: সর্বোচ্চ ২০ হাজার ফ্রাঙ্ক (২৮ লাখ ২২ হাজার ৬১৭ টাকা)
* পিএইচডি প্রার্থীদের জন্য জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ: প্রতি বছর ৬০৮ ফ্রাঙ্ক বা ৮৫ হাজার ৮০৮ টাকা
* জেনেভা একাডেমি অব ইন্টার্ন্যাশনাল হিউম্যানিটারিয়ান ল অ্যান্ড হিউম্যান রাইট্স স্কলারশিপ: সর্বমোট ১৮ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক (২৫ লাখ ৪০ হাজার ৩৫৫ টাকা)
* উন্নয়নশীল দেশের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নেসলে এমবিএ স্কলারশিপ: সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ফ্রাঙ্ক (৩৫ লাখ ২৮ হাজার ২৭১ টাকা)
* ফ্র্যাঙ্কলিন অনার্স প্রোগ্রাম অ্যাওয়ার্ড: ২ হাজার ৬০০ থেকে ৯ হাজার ফ্রাঙ্ক (৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪০ থেকে ১২ লাখ ৭০ হাজার ১৭৮ টাকা)
পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
স্টুডেন্ট ভিসার আওতায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সেমিস্টার চলাকালীন প্রতি সপ্তাহে ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি পান। আর নানা উপলক্ষে ছুটির দিনগুলোতে ফুল-টাইম কাজ করা যায়।
নাগরিকদের সর্বোচ্চ ক্রয় ক্ষমতার দিক থেকে এই সুইজারল্যান্ড সারা বিশ্বে চতুর্থ।
লিপস্কলারের তথ্যানুসারে, বড় বড় সুইস শহরগুলোতে সর্বাধিক চাহিদা সম্পন্ন খণ্ডকালীন চাকরি ও তার ঘণ্টাপ্রতি মজুরির তালিকা নিম্নরূপ:
* ব্যাংক ইন্টার্ন: ৩৫ থেকে ৪০ ফ্রাঙ্ক (৪ হাজার ৯৪০ থেকে ৫ হাজার ৬৪৫ টাকা)
* আইটি সাপোর্ট স্পেশালিস্ট: ৪০ থেকে ৪৫ ফ্রাঙ্ক (৫ হাজার ৬৪৫ থেকে ৬ হাজার ৩৫১ টাকা)
* হোটেল রিসেপশনিস্ট: ২৫ থেকে ৩০ ফ্রাঙ্ক (৩ হাজার ৫২৮ থেকে ৪ হাজার ২৩৪ টাকা)
* খুচরা বিক্রয় সহকারী: ৩৫ থেকে ৪০ ফ্রাঙ্ক (৪ হাজার ৯৪০ থেকে ৫ হাজার ৬৪৫ টাকা)
* রেস্টুরেন্ট ওয়েটার/ওয়েট্রেস: ২৫ থেকে ৩৫ ফ্রাঙ্ক (৩ হাজার ৫২৮ থেকে ৪ হাজার ৯৪০ টাকা)
* ট্যুর গাইড: ৫০ থেকে ৮০ ফ্রাঙ্ক (৭ হাজার ৫৭ থেকে ১১ হাজার ২৯০ টাকা)
* স্কি প্রশিক্ষক: ২৫ থেকে ৩৫ ফ্রাঙ্ক (৩ হাজার ৫২৮ থেকে ৪ হাজার ৯৪০ টাকা)
শেষাংশ
জীবনযাত্রার ব্যয়ভারের ভিত্তিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল দেশ সুইজারল্যান্ড। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানসহ দেশটির জীবন ধারণের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার সই বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সেই সূত্রে অধ্যয়ন বা গবেষণায় স্কলারশিপ বা আর্থিক সহায়তার মূল্যমানও পর্যাপ্ত। যার কারণে উন্নয়নশীল দেশের মেধাবীরা অনায়াসেই অংশ নিতে পারে উচ্চমানের শিক্ষাচর্চায়। ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ শিক্ষার্থীদের এই অর্জনের পথকে আরও সুগম করে। উপরন্তু, স্টুডেন্ট ভিসাপ্রাপ্তিতে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব এড়ানোর জন্য সময়জ্ঞান রেখে সুচিন্তিত ভাবে আবেদনের প্রয়োজনীয় নথিপত্রগুলো প্রস্তুত করা উচিত।
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.