
ডাঃ জাফর উল্লাহ একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান। জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা। জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মানবতার নেতা। অভিজাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে যান। পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে ইংল্যান্ডে এফ.সি.পি.এস ডিগ্রির জন্য গিয়েছিলেন।
তাই সেবার জন্য নাপিত ধোপা ইত্যাদি নিয়োগের ব্যবস্থা ছিল পরিবারের পক্ষ থেকে। আলিশান জীবন-যাপনের মায়া ত্যাগ করে স্বদেশের মুক্তিকামী জনগণের জন্য মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গনে ১ম সারিতে নাম লিখান। এফ.সি.পি.এস পরীক্ষার মাত্র ৭দিন বাকী থাকতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নেয়ার জন্য ভারতে চলে আসেন সাথে ছিলেন বন্ধু ডাঃ আব্দুল মুমিন। পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিড়ে ফেলেন।
ট্রাভেলস ডকুমেন্ট নিয়ে তুরস্ক হয়ে ভারতে চলে আসেন। ভারতে অবস্থানরত আহত মুক্তিযুদ্ধাদের স্বাস্থ্য সেবার কথা উপলব্দি করে সেখান থেকেই গণ-স্বাস্থের সেবা নিশ্চিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং অদ্যাবদি এ সেবায় নিয়োজিত আছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাঃ জাফর উল্লাহকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য ঢাকার কাছেই সাভারে ১০০ একর ভূমির ব্যবস্থা করে দেন। সেখানেই গড়ে তুলেন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ নানাবিধ স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র।
তৎকালীন সময়ে প্রতিবছর কলেরা, হাম, বসন্ত ইত্যাদি রোগে প্রচুর মানুষ মৃত্যু বরণ করতে হতো। তারই উদ্যোগে গণস্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় এসব রোগের কম মূল্যের ঔষধ ব্যবহার করে রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা করলেন। এ সব রোগের সাথে বর্তমান প্রজন্ম তেমন পরিচিত নহে।
কিন্তু ঔষধের সাথে পরিচিত। যেমন: কলেরা রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ১/২টি সেলাই সেবন করলেই সূস্থ্য হয়ে যান। অথবা এক চিমটি লবন, এক মুষ্টি গুড় এবং এক গøাস পানি মিশ্রিত করে খেলেই কলেরা রোগ ভালো হয়ে যায়। এসব তারই উদ্ভাবিত ফসল। এসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করছি আমরা সাধারণ জনগণ।
১৯৮২ সালে তাঁরই উদ্যোগে এবং তৎকালীন সরকারের সহযোগীতায় ঔষধ প্রশাসন ও ঔষধ নীতি প্রণীত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ঔষধ রপ্তানি হয়ে থাকে এবং ঔষধ শিল্পের মান দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাষ্ট্র গার্মেন্টস শিল্প থেকে যেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে, ঠিক তদ্রæপ ঔষধ শিল্প থেকেও প্রচুর মুদ্রা অর্জন করে থাকে। ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়ার মতো রোগে যখন সাধারণ জনগণ আক্রান্ত তখন ডাঃ জাফর উল্লাহ আবিষ্কার করলেন মাত্র ৭০ পয়সা দামের প্যারাসিটামল। এই ৭০ পয়সার ট্যাবলেট সেবন করলেই যেখানে রোগ নিরাময় সম্ভব সেখানে ৭/৮ টাকা দরের ট্যাবলেট কেন ব্যবহার করতে হবে। তখন থেকেই তো ডাঃ জাফর উল্লাহ সাহেবের সাথে স্বার্থের দ›দ্ব শুরু হয় কতিপয় স্বার্থান্বেষি ধান্দাবাজদের সাথে। করোনা মহামারিতে ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যারের উদ্যোগে ডাঃ বিজন শীল গংদের সহযোগীতায় বিশ্বের আদলে কীট উদ্ভাবন করলেন এবং যথাযথ কতৃপক্ষের তা ব্যবহারের অনুমোদন চাইলেন। তখনই বাধা হয়ে দাড়ালেন কতৃপক্ষ। এখনও অনুমোদন হয়নি। হবে বলেও বিশ্বাস নেই। হয়তো ডিপ ফ্রিজে তিনির উদ্ভাবিত কীটটি রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যারের উদ্ভাবিত কীট যুক্তরাষ্ট্র, তুরষ্ক সহ অনেক দেশ নিয়েছে, কিন্Íু দুঃখের কথা হলো বাংলাদেশের সরকার এখনও কীটটি অনুমোদন বা বাজারজাত করণ করেনি। না করারই কথা। কারণ ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যারের উদ্ভাবিত কীটের মূল্য ২৯০ টাকা এবং আমদানিকৃত কীটের মূল্য প্রায় ৩৫০০ টাকা। এ ব্যয়বহুল ঔষধ সাধারণ জনগণকে মূল্য দিয়ে ব্যবহার করতে হবে যা সাধারণ জনগণের জন্য কষ্টকর। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল সাধারণ জনগণের আর্তনাদ কি শুনবে । না। কিছুতেই শুনবে না। তাদের কাছে কাড়ি কাড়ি টাকার দরকার।
ডাঃ জাফর স্যারের উদ্ভাবিত কীট ঔষধ প্রশাসনের ভাষ্যমতে সঠিক কি না তা ভালোভাবে যাচাই বাছাই করতে হবে। এর জন্য কমিটি হয়েছে। কমিটি কোনদিন ফলাফল দিবে তা একমাত্র আল্লাহ জানেন। তবে অতীত অভিজ্ঞতা বলে এ সব কমিটি শুধু কাগজে কলমেই লিপিবদ্ধ থাকবে। ততোদিনে সাধারণ জনগণ গণহারে আক্রান্ত হয়ে লাশের মিছিল শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যারের কীটটি আলোর মুখ দেখবে কি না সন্দেহ হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যার সহ স্ত্রী, পুত্র করোনা আক্রান্ত হয়ে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তারই উদ্ভাবিত কীট দিয়ে তাকেও তার পরিবারকে পরীক্ষা করে শরিরে করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে।
সরকার BSMMC তে PCR টেষ্টের মাধ্যমে করোনা পজেটিভ মর্মে তাদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাহলে এখানেই ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যারের উদ্ভাবিত কীটটি সঠিক বলিয়া ছাড়পত্র দিলেই তো সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে। স্বার্থান্বেষী মহলকে বলবো হাজার হাজার কোটি টাকা উত্তরাধীকারদের জন্য হয়তো রেখে যাবেন ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কিন্তু মনে রাখতে হবে মৃত্যুর সময় এসব টাকা আপনার কোন কাজে আসবে না। শুধু কাজে আসবে জাফর স্যারের নীতি আদর্শ ও ত্যাগের পথ অনুসরণ করলে।
ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যার তো কোন দিন মন্ত্রী এম.পি উপদেষ্টা কিছুই হননি। না হলে কি হবে ? তিনির দর্শন আজীবন বেঁেচ থাকবে। ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যার যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য ছিলেন তখন তিনির চোখের অপারেশনের জন্য ডাঃ সাহেব পরামর্শ দিলেন।
যেহেতু আপনি WHO এর সদস্য তাহলে বিশ্বের যেকোন ভালো দেশের ডাঃ কতৃক অপারেশন করানোর জন্য পরামর্শ দিলেন। সোজা উত্তর দিলেন আমার দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মতো। প্রতিষ্ঠান থাকতে কেন বিদেশে গিয়ে অপারেশন করাবেন। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে অপারেশন করালেন। অপারেশন সফল হলো। অদ্যাবধি তিনি ভালোই আছেন। এর নামই তো দেশপ্রেম।
২০১৮ এর জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করলেন বিবেকের তাড়নায়। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। ক্ষমতার মোহে ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতাসিনরা অতীত অভিজ্ঞতা বলে যে যতোই সত্য বলুক না কেন ক্ষমতাসীনদের বিরাগ বাজন হতে হয়। বিরাগবাজন হলে কি হলো ? ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যারের ভাষায় আমি আমার জায়গা থেকে সত্য বলতেই থাকবো। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কখনো বেঈমানী করতে জানেনা।
যেমনটি জানেন না জাফর উল্লাহ স্যার। ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যারের মতো গুনাবলী সম্পূর্ণ ২০/২৫ জন মানুষ বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করলে কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের শিরোনাম “ আমার সোনার বাংলা” কথাটি বাস্তবায়িত হওয়া মাত্র সময়ের ব্যাপার। কারণ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি বিশ্বের যে কোন রাষ্ট্রের চেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানে সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলের পূণ্য ভূমি। ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যার আমার জানামতে কোন রাজনৈতিক দলের সদ্য নহে। সময়ের সাহসী সন্তান হিসাবে জাতীয় যে কোন ক্রান্তিকালীন সময়ে সত্য কথা বলার মুর্ত প্রতীক। ডাঃ জাফর স্যারের গুনাবলী সম্পূর্ণ মানুষরা দীর্ঘজীবি হউন। অসূস্থ্য ডাঃ জাফর উল্লাহ স্যার আমাদের মাঝে সূস্থ্য হয়ে বীরের বেশে ফিরে আসুন। আমীন। রাজনৈতিক চাটুকাররা, দূর্নিতিবাজরা, ঘোষখোররা, চামচা বাজরা, তেলবাজরা, লুটেরা, গরিবের হক লুটপাটকারীরা, চুরি-চামারি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন যাহারা রাষ্ট্রীয় মন্ত্র অসৎ পথে ব্যবহার কারীরা এই করোনা রোগের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি পুতঃপবিত্র হবে বলে আমার বিশ্বাস । “আমীন”।
– সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার ও কলামিষ্ট।
সংবাদটি শেয়ার করুন।