প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৬ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত: শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ সফল হোক

admin
প্রকাশিত নভেম্বর ২৪, ২০২০, ০৬:২৫ অপরাহ্ণ
বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত: শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ সফল হোক

 

বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা দূর করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, আমরা তাকে স্বাগত জানাই।

এ খাতে দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা চলে আসছে। সারা দেশে অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে ৭ হাজার ৪১০টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলো নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি। নিবন্ধন সম্পন্ন করার সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছিল। সেই সময় শেষ হয়েছে, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।

এই হিসাবের বাইরে আরও দেড় হাজারের বেশি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর কোনো কাগজপত্র নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরও এগুলোর হদিস জানে না। অথচ এ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ তো গেল অবৈধভাবে কার্যক্রম চালানো চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানের বৃত্তান্ত। যেসব প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে চলছে, সেসবেরও সেবার মূল্য ও মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। রোগীদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো ফি আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ পরিপ্রেক্ষিতে এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে।

আশার কথা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বুধবার জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত চিকিৎসা ফি, টেস্ট ফিসহ বিভিন্ন ফি সরকারিভাবে নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সেবার মান অনুযায়ী ক্যাটাগরিভিত্তিক ফি নির্ধারণ করা হবে। তিন স্তরে নির্ধারিত হবে সেবা ও পরীক্ষার ফি। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের ফটোকপি ও বিভিন্ন সেবার মূল্য বোর্ডে প্রদর্শন করা হবে। অফিস সময়ে কোনো সরকারি চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতালে সেবা দিতে পারবেন না।

এসব বিষয়ে শিগগিরই একটি নীতিমালা জারি করা হবে। আর সরকারি এসব নির্দেশ যথাযথভাবে মেনে চলা হচ্ছে কিনা, তা দেখভাল করতে গঠিত হবে তিন সদস্যের পাঁচটি পরিদর্শন কমিটি। প্রতিটি কমিটির ওপর নিয়মিত নির্দিষ্ট এলাকা পরিদর্শনের দায়িত্ব থাকবে। কোনো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এটি অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হলে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মানুষকে আর প্রতারিত ও হয়রানির শিকার হতে হবে না। স্বাস্থ্যসেবার নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিধিবহির্ভূতভাবে যে বাণিজ্য করে আসছে, তো রোধ হবে।

সরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানেও নিশ্চিত হবে স্বাস্থ্যসেবা। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন যাতে বাধার মুখে না পড়তে পারে সে জন্য এর আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি থাকা দরকার। সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের একটি প্রক্রিয়া ঠিক করতে হবে। দেশের স্বাস্থ্য খাতে নানারকম দুর্নীতি-অনিয়মের কথা সর্বজনবিদিত।

করোনাকালীন সংকটে এসবের কিছু কিছু প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসেছে। আমাদের স্পষ্ট কথা হল, হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করতে হলে তার আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে।

নিজেদের খেয়ালখুশি মতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। প্রচলিত আইনের আওতায়ই থাকতে হবে সবাইকে। সরকারের নতুন উদ্যোগের ফলে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে, এটাই প্রত্যাশা।

সংবাদটি শেয়ার করুন।

    No feed items found.