প্রজন্ম ডেস্ক:
১১ বছরেও শেষ হয়নি বিশ্বব্যাংকের ঋণ ও অনুদানের একটি প্রকল্পের কাজ। চতুর্থবার সংশোধনের পর গত জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই সময়ে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। বাকি টাকা খরচ করার জন্য পঞ্চমবারের মতো সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের বেতন, আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ, পরামর্শকদের সম্মানীসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রকল্পটির নাম নেই। পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন, সংশোধন গাইডলাইনে সাধারণত এভাবে প্রকল্প সংশোধনের সুযোগ নেই। ‘স্ট্রেংদেনিং অব দ্য মিনিস্ট্রি অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিলিফ (এসওএমডিএমআরপিএ) প্রোগ্রাম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ প্রকল্পের হচ্ছে এই বাস্তব চিত্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।
সার্বিক ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক অঞ্জন চন্দ্র পাল (যুগ্ম সচিব) বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শেষের দিকে। গত জুন পর্যন্ত ৮৮ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করার জন্য পঞ্চমবার সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ১২ শতাংশ কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কী কী কাজ বাকি রয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রকল্পের এমআইএস, ১৮৪ জন উপসহকারী প্রকৌশলীর প্রকল্প সমাপ্তিকরণ সুবিধা, কক্সবাজারে কর্মরত ১১ জন উপসহকারী প্রকৌশলীর বেতন, আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ, পরামর্শকদের সম্মানী, ফার্নিচার, স্টাফদের বেতন প্রদান করা হবে।
শেষ সময়ে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ, পরামর্শকদের সম্মানী কেন ধরা হয়েছে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঋণ ও সরকারি অর্থ খরচ হয়েছে। কিন্তু অনুদানের টাকা রয়ে গেছে। তাই কয়েকটি খাতে খরচ ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি ছয় মাস বাড়ানোর অনুমোদন দিলে তা খরচ করা হবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কেন এত দেরি হয়েছে আগে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা বলতে পারবেন। আমি গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্প পরিচালক পদে নিযুক্ত হই। গত জুন মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখনো ২০ জন মানুষ কাজ করছেন। প্রকল্প অনুমোদন পেলে তারা বেতন-ভাতা পাবেন।’
এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সদস্য (সচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রকল্পটি যাচাই করতে ইপিইসি সভা হয়েছে। তাতে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কর্মরত ১৮৪ জন উপসহকারী প্রকৌশলীর বেতন-ভাতাদিসংক্রান্ত খরচ ও প্রকল্পের আওতায় ২৬টি ডাবল কেবিন পিকআপের জ্বালানি ও আনুষঙ্গিক খরচ নির্বাহ করার জন্য এ পর্যায়ে অনুমোদনের কোনো সুযোগ নেই। মন চাইল প্রকল্প সংশোধনের নামে টাকা খরচ করা হবে। সেই দিন চলে গেছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রকল্প পাস করে অর্থ আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই।’
প্রত্যেকটি প্রকল্প সংশোধনের সময় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মতামত নিতে হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইএমইডির সংশ্লিষ্ট পরিচালক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান সরকার বলেন, ‘আমরা বারবার প্রকল্প সংশোধন নিরুৎসাহিত করি। এতে অর্থের অপচয় ও কাঙ্ক্ষিত জনগোষ্ঠী সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।’
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারে মায়ানমার থেকে আসা নাগরিকদের অনুপ্রবেশের ফলে স্থানীয় জনগোষ্ঠী সামাজিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক এগিয়ে আসে। সরকার ২০১৩ সালের জুলাইয়ে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। এতে মোট খরচ ধরা হয় ২৭৭ কোটি টাকা। তার মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ধরা হয় ২৪৪ কোটি টাকা ও অনুদান ৩০ কোটি টাকা। আর সরকারি কোষাগার থেকে খরচ ধরা হয় ৩ কোটি টাকা। কক্সবাজারসহ অন্যান্য এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা), মানবিক সহায়তার আওতায় ত্রাণ সহায়তা ও ভিজিএম কার্যক্রম ধরা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করার জন্য ২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর থেকে বিশ্বব্যাংকের অনুদানের টাকায় অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্লাস (ইজিপিপি) বাস্তবায়ন করা হয়।
কিন্তু কাজে গতি বাড়েনি। দেখভাল করতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার জন্য কনসালট্যান্ট বা পরামর্শক খাতে টাকা খরচ করার পরও চতুর্থবার সংশোধন করে ২০২৪ সালের জুনে সমাপ্ত করার শেষ সময় বেঁধে দেয় পরিকল্পনা কমিশন। কিন্তু ওই সময় পর্যন্ত খরচ হয় ২৪৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বা আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ও অনুদান থেকে খরচ হয়েছে প্রায় ২৪৩ কোটি টাকা ও সরকারি অর্থ ২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। বিশ্বব্যাংকের টাকা অব্যয়িত রয়ে গেছে ৩১ কোটি টাকা।
এই টাকা খরচ করার জন্যই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা কমিশনে পঞ্চমবারের মতো সংশোধনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তাতে এবার খরচ ধরা হয়েছে ২৮৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ধরা হয়েছে ২৪৩ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং অনুদান প্রায় ২৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া জিওবি অর্থাৎ সরকারি অর্থ ধরা হয়েছে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৩-এর জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
চতুর্থবার সংশোধন করার পর ১১ বছরেও প্রকল্পের সব কাজ হয়নি। গত আগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তনের পর অর্থ সাশ্রয় করার জন্য অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ভালোভাবে পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তাই পরিকল্পনা কমিশনে যাচাই-বাচাই করতে কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (এসপিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান জানতে চান কী কী কাজে অনুদানের টাকা খরচ করা হবে। এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম শাফিকুল হায়দার বলেন, প্রকল্পের আওতায় ৪৯৫ জন উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে ১৯৫ জন কর্মরত। বিশ্বব্যাংক ২০২২ সালের ২৭ জুন ইজিপিপি ও কর্মসূচিভুক্ত কক্সবাজার জেলায় মনিটরিংয়ের জন্য ১১ জন উপসহকারী প্রকৌশলী ছাড়া অন্য কোনো উপসহকারী প্রকৌশলীর বেতন-ভাতাদি ২০২৩ সালের জুনের পর থেকে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়। প্রকল্প পরিচালককেও তা ই-মেইলে জানিয়ে দেয়। তাই জিওবি থেকে পরিশোধ করতে হবে। এ কাজে ৯ কোটি টাকার বেশি লাগবে।
তিনি আরও জানান, প্রকল্পের আওতায় ২৬টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান কেনা হয়। এসব পরিবহন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে দেওয়া হয় এবং এসব পরিবহনের জ্বালানি খরচও মেটানো হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জানিয়ে দেয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির পর থেকে আর জ্বালানি খাতে খরচ নির্বাহ করা যাবে না।
বিভিন্ন কারণে ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট প্রকল্পটির চতুর্থ সংশোধনী আনা হয়। এতে জিওবি থেকে এসব খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ জন্য ১৮৪ উপসহকারী প্রকৌশলী ও ২৬টি ডাবল কেবিন পিকআপের জ্বালানি খরচ করার সুযোগ নেই।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ জানায়, বিশ্বব্যাংক ২০২৪ সালের ২৬ মে জারীকৃত পত্রের মাধ্যমে জানায় বাকি কাজ শেষ করার জন্য ছয় মাস অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো যেতে পারে। সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব রোজিনা আক্তার বলেন, আলোচ্য প্রকল্পটি চলমান এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই। তা ছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরএডিপিতেও অন্তর্ভুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই।
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.