
স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজার পৌরশহর উপজেলার অন্তত: ৩ শতাধিক ছোট-বড় বস্তিতে বাস করেন প্রায় ৩৫ হাজার অধিবাসী। এরমধ্যে পৌরশহরে বস্তিবাসী অধিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। অথচ বস্তিবাসী পরিবারের বেশীরভাগ শিশুরই জন্মসনদ নেই। উদাসীন অভিভাবক, মা-বাবার সচেতনতার অভাবসহ নানা কারণে সরকারি জন্ম নিবন্ধন তালিকায় তাদের নাম নেই।
জানা গেছে, শিশুর বাবা-মায়ের পরিচয় ও ঠিকানা না থাকা, নিবন্ধন নিয়ে শিশুর বাবা-মায়ের অজ্ঞতাসহ নানা কারণে তাদের নিবন্ধন করা হয়ে ওঠে না। যারা পথশিশু তাদের অনেকের পরিচয় ও বাসস্থান নেই। আর শুরুতে বাবা-মায়ের নাম না দিলে সার্ভারে প্রবেশ করা যায় না। বস্তিবাসী শিশুদের জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার পৌরসভার দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা বলেন, শিশুর টিকা কার্ড ও মা-বাবার এনআইডি নিয়ে এলে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হচ্ছে। ভাসমানদের বিষয়ে বিশেষ বা আলাদা কোনো নিয়ম নেই। পৌরসভার কর্মচারী আজগর হোসেন জানান, নতুন নিয়মে যখন ২০০১ সাল ও তার পরে জন্ম নেয়া কোনো শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করা হয় তাতে মা-বাবার জন্ম নিবন্ধনের নম্বর দিতে হয়। সে কারণে বর্তমানে কোনো শিশুর জন্ম নিবন্ধনের জন্য মা-বাবার জন্ম নিবন্ধন থাকাটা আবশ্যক।
এদিকে পরিচয়হীনদের জন্য ২০১৮ সালের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন বিধিমালায় সুস্পষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও নিবন্ধন কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ভুগছে পথশিশুরা। কাটছে না নিবন্ধন জটিলতা।
দেখা যায়, বিয়ানীবাজারের বেশিরভাগ পথশিশু কিংবা বস্তির শিশুর জন্মনিবন্ধন সনদ নেই। যে কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে তাদের বেশ দূর্ভোগে পড়তে হয়। এছাড়া তাদের বড় একটি গোষ্ঠী বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিক সুবিধা থেকেও। বিয়ানীবাজারের সুজন সভাপতি এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন জানান, একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু যখন বুঝতে পারে তার কোনো জন্ম নিবন্ধন নেই, পরিচয় নেই, স্কুলের সার্টিফিকেট নেই— তখনই তার মধ্যে এক ধরনের দুঃসাহস ও অপরাধপ্রবণতা কাজ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্তিবাসী এক টমটম চালক বলেন, দিনাজপুর থেকে এসে অনেক বছর ধরে এখানে আছি। শহরে টমটম চালিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করছি। স্থানীয় বাসিন্দা না হওয়ার কারণে এনআইডি করতে পারিনি। কয়েকবার চেষ্টা করে সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদও করতে পারিনি। ছেলেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে গিয়ে এ জটিলতায় ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। পরে কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছি। বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে দুই বছর আগে ঈদুল ফিতরের সময় পৌরশহরের একাধিক বস্তিতে শিশুদের মধ্যে ঈদের পোষাক বিতরণ করা হয়। তখন অনেক শিশুর অভিবাবককে জন্মসনদ নিয়ে জ্ঞিাসা করলে কারো কাছেই তা নেই বলে জানান প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মুকিত মোহাম্মদ।
এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজারের শেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, প্রাথমিকে যেকোনো শিক্ষার্থী নতুন ভর্তির ক্ষেত্রে প্রথমেই জন্মনিবন্ধন প্রয়োজন হয়। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে। সেজন্য এ প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে কাউকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না।
বিয়ানীবাজার উপজেলায় বস্তিতে বেড়ে ওঠা কিংবা পথশিশুদের নিয়ে সরকারিভাবে কোনো পরিসংখ্যান নেই। সূত্রমতে, এখানকার বস্তির শিশুদের বেশিরভাগ দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এসেছে। সড়ক পথে যাতায়াত এবং আবাসনের জন্য তুলনামূলক সুবিধাজনক হওয়ায় এখানে ভাসমান শিশুরা সহজে জায়গা করে নেয়। তবে তারা একই স্থানে দীর্ঘসময় স্থায়ী হয় না।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন, ২০০৪-এর ধারা ৫(১)-এ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গ নির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনে কোনও বৈষম্য করা হয়নি বা কোনও বিশেষ শ্রেণিকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সব নাগরিকের অধিকার। পথশিশু এতিম, প্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, পিতৃ বা মাতৃপরিচয়হীন, পরিচয়হীন, বেদে, ভবঘুরে বা ঠিকানাহীন যে-ই হোক না কেন, কাউকেই নিবন্ধন থেকে বাদ দেয়া যাবে না বা তার নিবন্ধন অস্বীকার করা যাবে না।
সংবাদটি শেয়ার করুন।