
অসম চুক্তিতে লক্কড়ঝক্কড় দুটি উড়োজাহাজ লিজে আনার কারণে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে।
জানা যায়, ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ লিজ নেয় বিমান। এ দুটি এতই লক্কড়ঝক্কড় ছিল যে, এর একটির ইঞ্জিন ১১ মাস না যেতেই এবং অপরটির ইঞ্জিন দেড় বছরের মাথায় বিকল হয়ে পড়ে। এরপর মোটা অঙ্কের অর্থে ভাড়ায় আনা হয় ইঞ্জিন। তখন থেকে বিভিন্ন সময়ে উড়োজাহাজ দুটি ঘন ঘন নষ্ট হতে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রে ইঞ্জিন মেরামতের পেছনে উড়োজাহাজ না চালিয়েই বিমানকে প্রতি মাসে পরিশোধ করতে হয়েছে ১১ কোটি টাকা। এভাবে দুই উড়োজাহাজের পেছনে সংস্থাটিকে প্রতি বছর গচ্চা দিতে হয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, অসম চুক্তির মাশুলও দিতে হচ্ছে বিমানকে।
চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া নেয়ার সময় উড়োজাহাজ দুটি যে অবস্থায় আনা হয়েছিল, ফেরত দেয়ার সময় সে অবস্থা করে দিতে হবে। এসব কারণে উড়োজাহাজ দুটি দীর্ঘদিন ধরে বিমানের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে ছিল।
বলা যায়, লিজের নামে হাতি পুষেছে বিমান। স্বস্তির বিষয়, অবশেষে তা ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছে। বিষয়টিকে বিমানের কলঙ্ক মোচন হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, অর্থাৎ বড় অঙ্কের লোকসান।
এ জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলে মনে করি আমরা। জানা যায়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে লিজ চুক্তিতে আনা হয়েছিল উড়োজাহাজ দুটি। এর পেছনে কার কী স্বার্থ ছিল, তা উদ্ঘাটন করতে হবে।
বস্তুত অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পনা, ব্যাপক দুর্নীতি, মাথাভারি প্রশাসনসহ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লোকবলের কারণে বিমানকে প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের অর্থ লোকসান দিতে হচ্ছে।
জাতীয় পতাকাবাহী রাষ্ট্রায়ত্ত একটি সংস্থার এ হাল উদ্বেগজনক। বিমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই। সংস্থাটির নেই সেবার মান বৃদ্ধির কোনো প্রয়াস।
ফলে পারতপক্ষে কেউ বিমানের উড়োজাহাজে চড়তে চান না। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কোনো প্রতিষ্ঠানকে টিকে থাকতে হলে সে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ, যোগ্য ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার বিকল্প নেই। এদিক থেকেও বিমানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
অদক্ষতা, অযোগ্যতা আর দুর্নীতি এ সংস্থাটির পরিচয়ের সঙ্গে যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বিমানের পিছিয়ে পড়ার এটাই অন্যতম কারণ।
অতীতে জনবল কমিয়ে আনা এবং বিদেশিদের সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়াসহ বিমানকে দুর্নীতিমুক্ত করার নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। তাই দাবি উঠেছে বিমানকে গতিশীল করতে একটি পেশাদার পরিচালনা পর্ষদ গঠনের। এ লক্ষ্যে সরকার পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।
নতুন উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে ইতিপূর্বে বিমানের শীর্ষ ম্যানেজমেন্টের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
তাছাড়া বিমানের সেবার মান নিয়েও মন্ত্রিসভার বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তাই আমরা আশা করব, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেই এদিকে দৃষ্টি দেয়া হবে। বস্তুত তা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলেই মনে হয়।
সংবাদটি শেয়ার করুন।