
কথায় আছে, ডাক্তারের চিকিৎসা জনিত ত্রæটির কারণে বা ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যু হলে একজনই ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিন্তু একজন দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে দল, তথা গোটা দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেমনটি ১৯৭১ সালে জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্টার বিরোধীতা করেছিল। যদিও তাদের দৃষ্টিতে ভৌগলিক কারণে একত্রিত পাকিস্তান থাকাটা যুক্তিযুক্ত ছিল কিন্তু দেশের সাাধারণ জনগণ তাদের কনসেপ্টটি প্রত্যাখ্যান করেছিল। দেশ স্বাধীন হলো।
স্বাধীনতার পর বঙ্গঁবন্ধুর উদারতায় ১৭৭জন শীর্ষ স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীকে সাধারণ ক্ষমা করে দিয়ে মহত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। তখন বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর উচিত ছিল সাধারণ জনগনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া কিন্তু তারা তো করেন নি। যার খেসারত নতুন প্রজন্মকে “যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে সাধারণ জনগনের কাছ থেকে শুনতে হচ্ছে। দুঃখ প্রকাশ কোন কোন ক্ষেত্রে মহত্বের পরিচয় হয়ে থাকে। আর এ দুঃখ প্রকাশ করলে, তাদের বিরোধী জোট সাধারণ জনগণকে যুদ্ধাপরাধী দল হিসাবে প্রচার ও প্রকাশ করার সাহস পেতনা বরঞ্চ তাদের এ খোড়া যুক্তি সানন্দে প্রত্যাখ্যান করতো এবং বঙ্গঁবন্ধু যেহেতু শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দিয়েছেন সেহেতু এ প্রসঙ্গটি আর না বলাই ভালো। বলাবাহুল্য বাংলাদেশে জামাতে ইসলামীর নির্দিষ্ট দর্শন বা আইডিওলজি আছে এবং তাদের বিশাল প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী আছে। যেখানে অন্যদল বা মতের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়নি। যার কারণে অন্য দলগুলো বারংবার ভেঙ্গেঁছে বা নেতারা যখন যে দলে ক্ষমতার স্বাদ বা ঘ্রাণ পেয়েছে সে দলে চলে গেছে কিন্তু বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর ক্ষেত্রে ঘটেনি।
স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গঁবন্ধু কর্তৃক ১৭৭জন শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমাকে ভালো চোখে দেখেনি ভারত এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাক সকল দল-মতের মানুষকে একত্রিত করে সোনার বাংলাদেশ গড়ার বঙ্গঁবন্ধুর স্বপ্ন ভারত কিন্তু ভালো চোখে দেখেনি। তখন তার এ দর্শনকে ভারত রাষ্ট্র ভালো চোখে দেখেনি। ভালো চোখে দেখবে কিভাবে ? কারণ আবুল মনসুর আহমদের লিখিত “রাজনীতির ১০০ বছর” বইটি পর্যালোচনা করিলে দেখা যায় পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্মই হয়েছিল দ্বি-জাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে। যদিও তাদের অখন্ড ভারতবর্ষ রাখার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। সেই প্রতিশোধ নিতে ভৌগলিক কারণে যুক্ত পাকিস্তানকে ভেঙ্গে খন্ড বিখন্ড করার মানসিকতা বারবরই পরিলক্ষিত হয় ভারতের আচরণ থেকে। যেমনটি কংগ্রেস সভাপতি মৌলানা আবুল কালাম আজাদকে ব্যবহার করে মুসলিম শক্তিকে বিভক্ত করে মুসলমানদের যৌক্তিক দাবীকে বরাবরই দাবীয়ে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু অখন্ড পাকিস্তানের জনক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এর বুদ্ধিমত্তার কাছে হার মানতে হয়েছে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট। সেই প্রতিশোধ ভৌগলিক কারণে ১৯৭১ সালে নিয়েছে ভারতবর্ষ যা তাদের স্বার্থেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সহযোগীতার অন্যতম কারণ। এ কারণেই ভারত বরাবর বাংলাদেশকে তাদের করজরাজ্য হিসাবে দেখতে চায়।
প্রকৃত বন্ধু হলে ন্যায় নীতির ভিত্তিতে উভয় রাষ্ট্র একত্রে বসে ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে সহজ হত। ভারতের একগুয়েমির কারণে বাংলাদেশ প্রতিটা ক্ষেত্রে ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং হবে।। কেননা সে রাষ্ট্র কিন্তু বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু নহে। গোটা ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাঁ বিরাজমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ¯েøাগান “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার” কিন্তু ভারতবর্ষে কি তা হচ্ছে ? না মোটেও না।
বঙ্গঁবন্ধু কার প্ররোচনায় “বাকশাল” গঠন করলেন জানিনা।। বঙ্গঁবন্ধুর স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়া। যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণে। অবাধ গণতন্ত্র ভোট এবং ভাতের অধিকার প্রতিষ্টার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। জনগণ যার যা কিছু আছে তা নিয়ে ঝাপিয়ে পড়–ন পাকিস্তানি শাসকগোষ্টীর বিরুদ্ধে বঙ্গঁবন্ধু আহবান জানিয়েছিলেন। সে আহবানে সাড়া দিয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানীদের পরাজিত করে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলো এবং সে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী হলেন বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। খ্যাতি পেলেন অবিসংবাদিত নেতার। কিন্তু সেই অবাধ গণতন্ত্র, ভোট এর দর্শণ থেকে বিচ্যুত হয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন “বাকশাল” নামক দল। সেই কলংক আজও আওয়ামীলীগ সাধারণ জনগনের কাছে জবাবদিহি করতে হচ্ছে এবং হবে। “বাকশাল” গঠন বঙ্গঁবন্ধুর ভুল সিদ্ধান্ত ছিল এ কথা ইতিহাসবিদরা বলে থাকেন।
১৯৯৪ সালে মেজর জেনারেল (অব:) মাজেদুল হক (এম.পি) মৃত্যুবরণ করেন। আসনটি শুন্য হলো। উপ-নির্বাচন হলো। ভোট কারচুপি হলো। সরকার ভোট চুরি রোধে ব্যর্থ হলো। রাজনীতিবিদরা আখ্যা দিলেন “মাগুয়া মার্কা” নির্বাচন মানিনা, মানব না। গোলাম আজম স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য “তত্ত¡াবধায়ক” সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার রুপ রেখা দিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, জামাতে ইসলামী সহ সকল সংসদ সদস্যগণ সংসদ থেকে পদত্যাগ করলো। রাজপথ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে উত্তাল হল। আওয়ামীলীগ সফল হলো।
তখনকার ক্ষমতাসীন দলের প্রধানমন্ত্রী দেশ নেত্রী খালেদা জিয়া আন্দোলন দমনে ব্যর্থ হলেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারী ভোটার বিহীন নির্বাচন হলো। প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে “তত্ত¡াবধায়ক” সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করলেন। বিতর্কিত না করে সরকার কঠোরভাবে স্বচ্ছ নির্বাচন করলে “মাগুরা মার্কা” ইস্যুতে বিরোধীদল আন্দোলনের সুযোগ পেতনা। ২০০১ সালে বি.এন.পির নেতৃত্বে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতাসীন হয়। কি কারণে বি.এন.পি প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব প্রফেসর বি. চৌধুরীকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় দিয়ে প্রফেসর ইয়াজ উদ্দিনকে ক্ষমতাসীন করাও ছিল রাজনৈতিক ভুল। যার খেসারত বি.এন.পি কে দিতে হচ্ছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসকন্যা খ্যাত শেখ হাসিনা কোর্টকে ব্যবহার করে “তত্ত¡াবধায়ক” সরকার বিলুপ্ত করে ২০১৪ এবং ২০১৮ এর ভোটার বিহীন নির্বাচন করেছেন যা হয়তো বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য কালো অধ্যায় হিসাবে রচিত হলো ইতিহাসের ছাত্ররা বলে থাকেন। ১৯৮৬ সালে চট্রগ্রাম লালদিঘির ময়দানে গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৫ দলের সভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন এরশাদের অধীনে যিনি নির্বাচনে যাবেন তিনি জাতীয় বেঈমান হবেন কিন্তু তিনি চলে গেলেন এরশাদের অধীনে নির্বাচনে সে অপবাদ দলকে এখনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে।
দৃঢ় মনোবলের অধিকারী ৩য় বারের প্রধানমন্ত্রী আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কঠিন সময় অতিক্রম করছেন। এর পরও দেশ এবং দলের অগণিত নেতাকর্মী তার দিকে তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশে জামাতে ইসলামী আগেই বলেছি একটি সুসংগঠিত দল ও তার বিশাল চৌকস কর্মী বাহিনী আছে। যেখানে বাংলাদেশের অন্য কোন দলে নেই বললে চলে। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল হয়তো ভারতের দাবার চালে টোপ গিলে প্রায় ২০ বৎসর আপনার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরীক বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কিন্তু একটা কথা স্বরণ রাখতেই হবে, প্রায় ২০ বৎসর যাবত আপনার নেতৃত্বে জোট ছেড়ে কেহ ক্ষমতাসীনদের ফাঁদে পা রাখে নাই বা মন্ত্রীত্ব গ্রহণ করে নাই। সেটাই আপনার সফলতা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় তৃতীয় বিশ্বে ক্ষমতাসীন দল “ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি” এপলাই করে থাকে। ক্ষমতাসীনরা সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে কথিত মাঠের বিরোধী দল বি.এন.পি এর নেতৃত্বাধীন জোট এর কাছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে ২০১৪ এবং ২০১৮ এর নির্বাচনের মাধ্যমে যে প্রহসন করেছে জাতি কিন্তু ক্ষমা করবেনা। অশুভ শক্তির ফাঁদে পা না দিয়ে বেগম জিয়া আপনার বলিষ্ট নেতৃত্বে জামাত সহ ২০ দলকে সুসংহত বা অটুট রাখুন কারণ দেশের জনগণ আপনার সাথে আছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী দলকে জোট থেকে ত্যাগ করবেন কি না তা আপনাকেই ভেবে দেখতে হবে। বল এখন আপনার কোর্টে।
** লেখক: সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বিয়ানীবাজার।
সংবাদটি শেয়ার করুন।