প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৭ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

প্রসঙ্গ: দাম্পত্য জীবনে প্রশান্তি” বিবাহ আইন ও সামাজিক প্রচলিত রীতির সংস্কার ও কতিপয় প্রস্তাবনাঃ-

admin
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ
প্রসঙ্গ: দাম্পত্য জীবনে প্রশান্তি” বিবাহ আইন ও সামাজিক প্রচলিত রীতির সংস্কার ও কতিপয় প্রস্তাবনাঃ-

এডভোকেট মোঃ আমান উদ্দিন:
১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক আইন ও যৌথ নিকাহ নামা সম্পাদনের আইন রচিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৪সালে নিকাহ নামার আইন সংশোধন করে স্বামী স্ত্রীর নিকাহ সম্পাদনের ক্ষেত্রে ২১টি শর্তের আলোকে যৌথ চুক্তিনামার মাধ্যমে বিবাহ সম্পূর্ণ হয়। স্বামী স্ত্রী উভয়কে তালাকের ক্ষমতা প্রদান করা হইয়াছে অর্থাৎ সম-অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে সভ্যতার ক্রমবিকাশ সাধনের জন্য যুগে যুগে আইনের সংস্কার হবে। এটাই স্বাভাবিক। ১৯৬১ সালে আইন রচিত হওয়ার পূর্বে কি বিবাহ হয় নাই ? অবশ্যই হয়েছে। বিবাহ সম্পাদনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোন আইন ছিল না। গতানুগতিক পদ্ধতিতে দলিল লেখনের ধারায় স্বামীর স্বার্থের অনুকূলে চুক্তি সম্পাদিত হতো। নির্দিষ্ট কোন কাজী ছিলেন না। অর্থাৎ বিবাহের রেজিষ্ট্রেশন পদ্ধতিটা ছিল সম্পূর্ণ হ-য-ব-র-ল। প্রাচীন সভ্যতার যুগে শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত সীমিত ছিল।

বর্তমান সভ্যতার যুগে বিবাহের প্রচলিত রীতি নীতি দেখলে মনে, হয় আমরা এখনো পুরোপুরি সভ্য হতে পারিনি। সভ্যতা বিকাশের জন্য বিবাহ আইনের সংস্কার সময়ের দাবী। সংস্কার প্রস্তাবের স্বপক্ষে প্রস্তাবনা তুলে ধরছিঃ-

১। বিবাহ সম্পাদনের পূর্বে পাত্র পাত্রী তাদের অভিভাবকদের অনুপস্থিতিতে একে অপরকে ভালোভাবে জানার এবং বুঝার সুযোগ থাকতে হবে।
২। মোহরানা সাব্যস্থ করবেন উভয়ের আর্থিক সংগতি বিবেচনা করে অভিভাবকরা। মোহরানার সম্পূর্ণ টাকা বিবাহ সম্পাদনের দিন পরিশোধ করতে হবে। মেয়ের অভিভাবকরা ইসলামী শরিয়তের বিধান মতে ইসলামী শরিয়া মতে তপশীলি ব্যাংকে উল্লেখিত টাকা ঋউজ করিবেন মেয়ের নামে। প্রতি মাসে লাভ্যাংশ তুলে স্ত্রী তার প্রয়োজনীয় হাত খরচ চালাতে পারবে তার নিজস্ব টাকা থেকে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিবাহের পর বিবাহ ভেঙ্গে গেলে মেয়েকে মোহরানা আদায়ের কোর্টের দ্বারস্থ হতে হয়, যা মোটেও কাম্য নয়।

৩। মেয়ে যখন স্ত্রী হয়ে স্বামীর বাড়ীতে যাবে তখন অভিভাবকরা যৌতুক বা উপঢৌকন হিসাবে অভিভাবকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছেলে পক্ষকে খাট, পালং, সুফা, হান্ডি-বাসন ইত্যাদি দিতে হয় যা মোটেও কাম্য নয়। কারণ ছেলেকে বাস্তবে হেয় প্রতিপন্ন করেন তার অভিভাবকরা। বিবাহের পূর্বে অবশ্যই ছেলের অভিভাবকের নির্দিষ্ট বাড়ী, ছেলের খাট, পালং, হান্ডি-বাসন ইত্যাদি নিয়েই বসবাস করেন। এখানে মেয়ে তার পিত্রালয় থেকে এগুলা কেন নিয়ে আসতে হবে। এগুলা স্বামীর বাড়ীতে নিয়ে আসা মানে স্বামীকে অপমানিত করা। এসব উপঢৌকন গ্রহণ বন্ধ করতে হবে সর্বাগ্রে স্বামীকে এগিয়ে আসতে হবে । গরিব পিতা-মাতা মেয়ের সম্মান রক্ষা করতে যেয়ে অন্যের দ্বারস্থ হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য নিয়ে ছেলে পক্ষকে দিয়ে থাকেন যা মোটেও কাম্য নহে। শরিয়তের বিধান মতে ছেলে পক্ষ বিবাহোত্তর আর্থিক সামর্থের কথা বিবেচনা করে ভূরি ভোজের আয়োজন করবেন কিন্তু মেয়ে পক্ষকে নিরুৎসাহিত করা হইয়াছে ভুরি কাজের ক্ষেত্রে ।

৪। স্ত্রী যখন স্বামীর বাড়ীতে ঘর সংসার শুরু করলো তখন দেখা যায় স্বামী এবং স্বামীর অভিভাবকরা নানা অযুহাতে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করতে আরম্ভ করল, স্বামীর বাড়ীর লোকজন। স্ত্রী কিন্তু শশুড় বাড়ীর লোকজনকে যথাযথ মর্যাদা যেমন-শশুড়কে আব্বা, শাশুড়ীকে আম্মা, দেবর, ননদ কে ভাইবোন ইত্যাদি সম্বোধন করে আপন করে নিতে চাইলো কিন্তু যখন নির্যাতন শুরু হলো তখন দেখা যায় শশুড় বাড়ীর লোকজনের কাউকে স্বাক্ষী দেওয়ার মতো একজনও পাওয়া দূস্কর। সুতরাং কোন নির্যাতন মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলে তার একক এজাহারা বা জবান বন্দি আইনের দৃষ্টিতে গ্রহনীয় হওয়া আবশ্যক।

আর এসব দাবী বাস্তবায়নের জন্য আইনের প্রয়োজন। আইন প্রনয়নের জন্য নারী নেতৃবৃন্দকে স্বোচ্ছার হতে হবে। এগুলা বাস্তবায়ন হলে লিঙ্গ বৈষম্য থাকবেনা সমাজে। সর্বত্রে শান্তির সুবাতাস প্রতিষ্ঠিত হবে।

লেখক: সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।

সংবাদটি শেয়ার করুন।

    No feed items found.