
ইসলামের মূল স্তম্ভ ৫টি। (১) বিশ্বাস (২) নামাজ (৩) রোজা (৪) যাকাত ও (৫) হজ্জ। এই ৫টি ফরজ পালন করা প্রকৃত মুমিন মুসলমানগণের উপর ফরজ করা হয়েছে। এসব লালন এবং পালন না করিলে গুনাহগার হইবে। তবে শর্ত থাকে যে, ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করতে টাকা পয়সা কিছুই লাগে না। শুধু অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও তাঁর প্রেরিত রাসুল (সাঃ) এর প্রতি আনুগত্য স্থাপন করলেই ঈমানদার হওয়া যায় ঠিক তদ্রæপ নামাজ পালনের জন্য আহকাম আরকান জানা থাকলে এবং পালন করলে নামাজ আদায় হয়ে যায়। রোজ পালন করতে হলে টাকা পয়সা কিছুই খরচ করতে হয় না। রোজার মহাত্ব অর্জন করতে হলে অন্তর আত্মা পবিত্র হতে হবে। রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালা কেন ফরজ করেছে তা উপলব্ধি করতে হবে। উপলব্ধি করতে হবে গরবি এবং ধনীর মধ্যে পার্থক্যটুকু। ধনীক শ্রেণী গরিবের যে ক্ষুধারজালা তা কিন্তু উপলব্ধি করতে হবে এবং তা যথাযথ লালন এবং পালন করতে হবে।
যাকাত ইসলামের ৪র্থ সস্তম্ভ বা খুটি। যাকাত আদায় করতে হলে উপযুক্ত টাকা নিজ হাতে থাকার পর অবশিষ্ট টাকার উপর শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত প্রদান করা বাধ্যতামূলক বা ফরজ। উপযুক্ত টাকা বলতে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা তার সমপরিমাণ টাকা হাতে থাকলেই ঐ ব্যক্তিকে যাকাত দিতে হবে। এই ত্যাগ স্বীকার করা প্রতিটি মুমিন মুসলমানের উপর ফরজ করা হইয়াছে। কিন্তু ইসলামের এই স্তম্ভটি পালন করা কষ্টকর। এই ফরজ পালন করতে গিয়ে মুসলমানগণ হিমশিম খেয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে যাকাত দাতাগণ যাকাত না দেওয়ার জন্য নানাবিধ খোড়া যুক্তি উপস্থাপন করে। যাকাত প্রদান থেকে বাঁচতে চায়। কিন্ত জেনে রাখা ভাল এই ত্যাগ স্বীকার করে যথাযথ ভাবে হিসাব করে নিজের আপনজনদের নিকট বিতরন করে প্রকৃত মুমিনবান্দাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। নতুবা এই টাকা আপনার জন্য সাপ বিচ্ছু হয়ে জীবনের অন্তিম মুহুর্তে কাল হয়ে দাড়াবে। সুতরাং হুশ বুদ্ধি ভাল থাকতে সঞ্চিত অর্থের যথাযথ হিসাব করে নিজের আপনজনদের মধ্যে বন্টন করে দিলে আপনি হবেন আল্লাহর নিকট প্রিয়জন। অন্যদিকে আপনার প্রদানকৃত যাকাতের টাকা দিয়ে গরিব হবে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী। কেননা ধনির নিকট হতে যাকাত প্রাপ্তি গরিবের অনুকম্পা নহে বরং তার যাকাত প্রাপ্তির অধিকার।
মনে করেন বিয়ানীবাজারে ১০টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা আছে। লোক সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ। যাকাত প্রাপ্তির হকদার ১ লক্ষ মানুষ। এই ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট ৪ লক্ষ মানুষের হিস্যা থেকে যাকাত প্রদান নিশ্চিত করতে পারলেইতো আর ১ লক্ষ মানুষের কোন অভাব অভিযোগ থাকার কথা নহে। মনে করা যেতে পারে বিয়ানীবাজারে সকল তপশীলী ব্যাংক সমূহে প্রায় ৩৫০০ কোটি টাকা যাকাত সমতুল্য সঞ্চিত অর্থ আছে। এই টাকা থেকে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত প্রদানকারীদের উপর বর্তায় প্রায় ৭৫টি কোটি টাকা। ব্যাংকে হয়ত গচ্ছিত টাকার পরিমান কমি বেশী হতে পারে। এই ৭৫ কোটি টাকা ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে নিজে নিজে বা প্রকৃত মানুষদের মাধ্যমে যথাযথ ভাবে বন্টন করে দিলে যাকাত গ্রহণকারী ব্যক্তি যেমনি উপকৃত হবে ঠিক তেমনি যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তিও আল্লাহর প্রদত্ত ফরজ কাজটি করে দায়মুক্তি নিয়ে আল্লাহর নেক বান্দা হিসাবে খ্যাতি লাভ করবে। তখন সমাজে থাকবে না ব্যবিচার। পরস্পর পরস্পরের হক আদায় করে উভয়ই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে।
যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি কদাচিত অযথা মাইকিং করে যাকাত প্রদানের ব্যবস্থা না কর গোপনে যাকাত গ্রহণকারীর নিকট যথাযথভাবে পৌছে দেওয়াই আপনার মূল কাজ। এখানে লোক দেখানোর কোন বিষয় নহে। মনে রাখতে হবে যখন আপনার মধ্যে লোকদেখানোর অহংকার জাগ্রত হবে তখনই যাকাত প্রদানের তাৎপর্য ভুলন্টিত হবে।
ইদানিং বিভিন্ন দাতা গোষ্টী বা দানশীল ব্যক্তিদের তালিকায় নাম লিখানোর জন্য ১০/১৫ হাজার টাকার মালামাল ক্রয় করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কতিপয় লোক প্রদান করে প্রচার মাধ্যমে গ্রহণকারীর এবং প্রদানকারীর ছবি প্রেরন করে খ্যাতি নিতে চায়। ঐ ব্যক্তি আসলে খ্যাতির বদলে ঘৃনাই পাচ্ছে লোকমুখে। উল্লেখ্য যে, কোন ভদ্রলোক সপ্তাহ খানেক উপবাস করলেও এ ধরনের সাহায্য বা ছবি বিক্রি করে সাহায্য গ্রহণ করবে না। করার কথাও নহে। সুতরাং এ ধরনের দানশীল ব্যক্তিকে যেহেতু প্রকৃত উদ্দেশ্য দান হচ্ছে না সেহেতু এ সব দান থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়ঃ। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রকৃত দাতা ঐ ব্যক্তি যিনি ডান হাত দিয়ে দান করলে বাম হাতকে জানাবেন না।
লেখক:
সভাপতি
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)
বিয়ানীবাজার, সিলেট।
সংবাদটি শেয়ার করুন।