প্রজন্ম ডেস্ক:
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে অন্যতম ভূমিকা পালনকারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক সচিব জাহাংগীর আলমকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পিলে চমকানো তথ্য দিয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব। একতরফা এ নির্বাচন আয়োজনে জাহাংগীর আলমের ছিল সক্রিয় ভূমিকা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসে। এ কারণে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাকে পুরস্কার হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব পদ দেয়।
জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মাঠপর্যায়ে তদারকির দায়িত্ব ছিল তার। জাহাংগীর আলম পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পুরো প্ল্যান মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। আওয়ামী লীগ ও ১৪-দলীয় জোট কোন আসন পাবে, দেশের কোন আসনে কোন ডামি ক্যান্ডিডেট এমপি হবেন, সেটি জানতেন তোফাজ্জল। প্রধানমন্ত্রীর এই মুখ্য সচিব প্রশাসনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন। তবে বিষয়টি তিনি (ইসি সচিব জাহাংগীর আলম) পরে জানতে পারেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, জুলাই মাসের শেষের দিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। দেশের অন্য জেলাগুলোতে আন্দোলন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু ঢাকার আন্দোলন কোনোভাবেই দমন সম্ভব হচ্ছিল না। এতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানকে সরিয়ে দিতে চাইছিলেন। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তাকে সরানো যায়নি।
গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে জাহাংগীর আলমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিতে ধানমন্ডির জিগাতলায় আবদুল মোতালিব নামে এক কিশোর নিহতের মামলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সাবেক এই সচিবকে পুলিশ ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির রমনা জোনের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম আদালতের ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. বেলাল হোসেনের আদালত তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জানা গেছে, গত ২৬ আগস্ট নিহত মোতালিবের বাবা আব্দুল মতিন বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলাটি করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৭৬ জনকে আসামি করা হয়।
সূত্র জানায়, জাহাংগীর বর্তমানে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবির হেফাজতে রয়েছেন। তাকে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, ‘সাবেক সচিব জাহাংগীর আলমকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
জাহাংগীরের মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, জাহাংগীর আলমকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের কিছু কথা তিনি অকপটে বলেছেন। আবার কিছু কথা গোপন করেছেন। সেগুলো জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আন্দোলনের শুরুতে পুলিশ নমনীয় ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে পুলিশকে নমনীয় আচরণ করতে বলা হয়েছিল। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি কোনো ছাত্রের লাশ পড়ে তাহলে গোটা দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাবে। সে জন্য পুলিশকে পরামর্শ দেওয়া হয়। জাহাংগীর পুলিশকে জানান, দুই ইস্যু ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলন দমনে সরকার বড় ভূমিকা নেয়নি। দুই ইস্যু কী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার কাছে জানতে চান। এ সম্পর্কে জাহাংগীর আলম জানান, ওই সময় পুলিশসহ কয়েক আমলাকে নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছিল। এ নিয়ে তৎকালীন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল। সরকার মনে করেছিল যে শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে বিষয়টি ঢাকা পড়বে। তবে ২ নম্বর কারণটি তিনি বলেননি।
যাত্রাবাড়ীর আন্দোলনকারীদের নিয়ে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হতাশ হয়েছিল বলে জানান জাহাংগীর। সেখানে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করার পরও আন্দোলনকারীরা চলে যায়নি। ওই স্পটে সরেজমিন তিনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গিয়েছিলেন বলে জানান। আন্দোলনকারীরা যাত্রাবাড়ীতে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ওভারব্রিজে ঝুঁলিয়ে রাখে। পুলিশ বারবার তাকে উদ্ধার করার জন্য একাধিক সাঁড়াশি অভিযান চালালেও সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। স্থানীয় জনতা সেখানে রাতের বেলা অবস্থান গ্রহণ করেন। হত্যার বিষয়টি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে এই বাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভেঙে যায় বলে সাবেক সচিব জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন।
জাহাংগীর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আরও বলেন, ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির নেতা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে হারানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। ওই আসনে এমপি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন মহারাজ। এ নিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশও করেছিলেন বলে তিনি জানান।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে পুলিশের টিয়ার শেল ও গুলির সংকট শুরু হয়। বিশেষ করে ঢাকায় এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। যেসব জেলায় অতিরিক্ত গুলি ও টিয়ার শেল ছিল, সেগুলো ঢাকায় আনার পরিকল্পনা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.