
প্রজন্ম ডেক্স:
‘যে মাটিকে নিজের করতে যুদ্ধ করেছি, সেই মাটিতেই আমার মাথা গোঁজাবার ঠাঁই নেই।’- অভিমান করে বললেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিক উদ্দিন।
একাত্তরে জাতির জনকের ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। দেশ স্বাধীন করলেও এখন বৃদ্ধ বয়সে এসে অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাকে।
সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মৃত আনফর আলীর ছেলে সফিক উদ্দিন অভাবের তাড়নায় ১৯৭৯ সালে বসতভিটা বিক্রি করে চলে যান মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় এক আত্নীয়ের বাড়িতে। বছরখানেক ধরে বিক্রি করে দেয়া সেই ভিটায় ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকছেন তিনি। প্রতি মাসে ১২শ’ টাকা ভাড়া দিতে হয় তাকে। নিজের জায়গা এখন পরের।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসনের জন্য দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে একতলা বাড়ি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু এই প্রকল্পের খোঁজ খবরও জানেন না বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের দক্ষিণ টিকরপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শফিক উদ্দিন। চরম দারিদ্রতার কষাঘাতে দিন পার করা মুক্তিযোদ্ধা শফিক তার মাসিক সম্মানি ভাতার টাকা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। স্ত্রী, ৩ মেয়ে রয়েছে তার। এরমধ্যে ২ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ২০১৬ সালে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তার ছেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট মারা যাওয়ার পর থেকে মানবেতন জীবনযাপন করে আসছেন তিনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২ কক্ষ বিশিষ্ট ভাড়াটিয়া ঘরে বসবাস করছেন এই মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু বিয়ানীবাজার উপজেলাজুড়ে অনেক স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বীর নিবাস পেলেও তিনি থাকছেন ভাড়াটিয়া বাসায়।
কথা হয় স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালিকের সাথে। তিনি বলেন, আমরা তার ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু ভালো জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
মুক্তিযোদ্ধা শফিক উদ্দিন বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর থেকে অন্যও বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে পরিবার চালিয়েছি। সংসারে অভাবের কারণে ১৯৭৯ সালে বসতভিটা বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাই। বর্তমানে বছর খানেক হল আমি গ্রামের বাড়িতে নিজের বিক্রি করে দেয়া ঘরে এখন নিজে ভাড়াটিয়া হিসেবে আছি। নগদ পুঁজি বা জমি বলতে কিছুই নেই যার কারণে ভাড়াটিয়া বাড়িতে থাকছি। আমি এক গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধা আমার একটি মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই।’
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আতাউর রহমান খান বলেন, বিয়ানীবাজারের গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রদান করা হয়েছে। ইউনিয়ন কমান্ডারের সাথে যোগাযোগ করে আমি আগামীতে নতুন তালিকা করা হলে সফিক উদ্দিনের নাম অর্ন্তভূক্ত করার চেষ্টা করব।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবুল আখতার জানান, স্থানীয় অনেক মুক্তিযোদ্ধার এরকম ঘরবাড়ি নেই। আসলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কিছু চায় না। শুধু ইজ্জত-সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। সফিক উদ্দিন তেমনি একজন।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুমী মাহবুবের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেনি।
সংবাদটি শেয়ার করুন।