প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১লা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

“টিনেজারদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া হেরোইন সেবীদের চেয়ে কি ভয়াবহ ?

admin
প্রকাশিত জানুয়ারি ৩০, ২০২০, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ
“টিনেজারদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া হেরোইন সেবীদের চেয়ে কি ভয়াবহ ?

এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
বাংলাদেশের কম্পিউটার সায়েন্সের আমুল প্রবর্তক, উদ্ভাবক, সংস্কারক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান, অনেক গ্রন্থের রচয়িতা, ছাত্রছাত্রী বা অভিবাবকদের কাছে তাদের আস্থার ঠিকানা বহিঃবিশ্বে তার জ্ঞানগর্ড বক্তৃতা, প্রভাবশালী পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়ে জাতিকে দিক নির্দেশনা যিনি দিয়ে থাকেন তার নাম ড. জাফর ইকবাল। ড. জাফর ইকবাল যেমনি বিজ্ঞানকে করেছেন সমৃদ্ধ, তেমনি রাজনীতি, সমাজ নীতি, অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছেন ড. এমাজ উদ্দিন আহমদ, ড. আসিফ নজরুল, ড. মাহফুজ উল্লাহ, ড. মাহবুব উল্লাহ, ড. পিয়াস করিম, ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ড. জাফর উল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।

বিশ্বে এ ধরণের বিবেক সম্পূর্ণ মানুষের কদর দিন দিন কমে যাচ্ছে। কমলে কি হবে ? বিবেক সম্পূর্ণ মানুষের কাছে তাদের সৃষ্টিশীল কীর্তি সদা জাগ্রত, জাগতিক শক্তি হিসাবে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। কেননা তাহারা কতিথ দালাল, টাউট, বাটপার, তেলবাজ, আতেলবাজ শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত নহে। তাদের চরিত্রে আমার জানামতে কোন কালিমা লেপনের বিন্দুমাত্র স্থান নেই। এসব বরেণ্য শিক্ষাবিদদের তত্ব ও বহুজাতিক প্রতিভা ছাত্রদের জীবনে প্রভাবিত করলে একদিকে ছাত্ররা হবেন সূস্থ চিন্তাধারার জনক, অন্যদিকে অভিভাবকরা হবেন গর্বিত সন্তানের জনক জননি।

ড. জাফর ইকবাল কিছুদিন পূর্বে খুলনার একটি বইমেলা অনুষ্ঠানে বলেছেন “টিনেজারদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া, আর হেরোইন, মদ, গাজা ইত্যাদি সেবনকারীদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। টিনেজারদের বয়স বলতে ১৩-১৯ বছর বয়সকে বুঝিয়েছেন। একজন পরিপূর্ণ মানুষ হতে যতœ সহকারে এই ৬টি বৎসরকে অভিভাবক এবং টিনেজারকে লালন পালন করতে হবে। কেননা এ বয়সে সে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, আইনজ্ঞ ইত্যাদি পেশায় যাওয়ার সুবর্ণ ক্ষেত্রে তৈরির উপযুক্ত সময়। এ লক্ষ্য প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অভিভাবক ও ছাত্র উভয়ই যতœশীল হতে হবে। টিনেজার তার উদ্ধাবনী শক্তি নষ্ট করার জন্য যত ধরনের বদ অভ্যাস প্র্যাক্টিস করা দরকার, তার সবই করতে চাইবে ১৩-১৯ বছর বয়সে। তখন শুরুতেই যদি অভিভাবক তার অহেতুক বদ অভ্যাসকে দমন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে টিনেজারদের ভবিষ্যত চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে। অভিভাবকের কাছে টিনেজাররা অবাধ্য সন্তান সন্ততি হিসাবে হেরোইন সেবীরা যে আচরন করে থাকে, তার সবই করতে কুণ্ঠাবোধ করবে না।

হেরোইন সেবীদের পুলিশ ভয় পায়। কারণ হেরোইন সেবীরা যথাসময়ে হেরোইন সেবন করতে না পারলে, দেয়ালে মাথা আচড়াবে, মুখে ফেনা দিবে, মরার চেষ্টা করবে। সে তার জীবনটাকে শেষ করে দিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে দিতে চাইবে, আমি কত নষ্ট হয়েছি, তোমাদের ভুলের কারণে।

বিজ্ঞান বলে ‘মোবাইল’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বস্তু। বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে মোবাইল অপরিহার্য। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে, এই প্রয়োজনীয় বস্তুটি ব্যবহারের উপযোগী হওয়ার পর, ভাল-মন্দ যোগ্যতা অর্জনের পর, এর যথোপযুক্ত ব্যবহার করলে আপনি উপকৃত হবেন, সাথে সাথে সমাজ উপকৃত হবে, সময়, অর্থ অপচয় সহ সকল ধরণের অপচয় রোধ হবে। সময়ই বলে দিবে আপনার স্বপ্নের সোনার ছেলে বা মেয়েটি কি স্মার্টফোন ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে ?

টিনেজারদের হাতে এই শক্তিশালী তেজষ্ক্রীয় পদার্থ তুলে দিলে অতিরিক্ত তেজষ্ক্রীয়তার করণে তার স্মৃতিশক্তি বিলুপ্ত হবে, বিলুপ্ত হবে তার সৃষ্টিশীল চিন্তাশক্তি। পিতা-মাতা তথা অভিভাবকদের কাছে সে অবাধ্য সন্তান হিসাবে পরিচিতি লাভ করবে। অতিরিক্ত তেজষ্ক্রীয়তার কারণে তার ব্রেইন টিউমার হওয়ার আশংকা বিদ্যমান। সুতারাং টিনেজারদের হাতে স্মার্টফোন জাতীয় কিছু তুলে দেওয়ার আগে এসব ক্ষতিকারক দিক অভিভাবকদের ভেবে দেখতে হবে। অভিভাবকদের আদেশ নিষেধ যখনই টিনেজারদের কাছে অকার্যকর হবে, বা টিনেজাররা অবাধ্য হবে, তখনই রাষ্ট্রকে শক্ত হাতে টিনেজারদেরকে দমন করতে হবে। পরিপত্র জারি করতে হবে, টিনএজ বয়সে স্মার্টফোন কারো কাছে পাওয়া গেলে নির্দিষ্ট মেয়াদে সাজা বা অর্থদন্ড উভয়ই দন্ডে দন্ডিত করে তা কার্যকরের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে রাষ্ট্রকে। তখন একদিকে রাষ্ট্র যেমনি মেধা শক্তিকে লালন করিতেছে মর্মে প্রতিয়মান হবে, ঠিক তেমনি অভিভাবকরা টিনেজারদের নানাবিধ অন্যায় আবদার থেকে রক্ষা পাবে। রাষ্ট্রকে উৎসাহিত করতে হবে ‘তাত্তি¡ক’ লেখকদের উদ্ভাবনী তত্ত¡ ও জ্ঞানভান্ডার অর্জন করতে হলে তত্ত¡ সমৃদ্ধ বই বেশী করে পড়তে হবে। ভাল-মন্দ বুঝার পর সময়ই বলে দিবে টিনেজার কি স্মার্টফোন ব্যবহারের উপযোগী ?
লেখকঃ সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।

সংবাদটি শেয়ার করুন।

    No feed items found.