প্রজন্ম ডেস্ক:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে দেশের অন্তত শতাধিক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ছাত্ররাজনীতি। পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক রাজনীতিও নিষিদ্ধ হয়েছে। তবে এই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্কও। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে এত ভালো কোনো ফল আসবে না। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলে উল্টো নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সংস্কৃতি বিমুখ হয়ে উঠবে। তাই ছাত্ররাজনীতি বন্ধ না করে এর সংস্কার এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ কার্যকর করা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলো বাড়ানো উচিত।
বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এক ধরনের উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে যেভাবে কথা উঠেছে, বিতর্ক চলছে, তাতে নতুন করে ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তারা।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনির্দিষ্টিকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে এই সিদ্ধান্তে আপত্তি তোলেন প্রায় সব ছাত্র সংগঠনের নেতারা। এরপর গত শনিবার ছাত্ররাজনীতি বন্ধের বিষয় নিয়ে ১০টি ছাত্র সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির নবনিযুক্ত উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এই সভায় ছাত্র নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের পরিবর্তে সংস্কার এবং ছাত্র সংসদ কার্যকর করার দাবি জানান।
বর্তমান ও সাবেক একাধিক ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানÑ সব আন্দোলনে ছিল ছাত্রদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। কিন্তু বিগত তিন দশক থেকে ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাজনীতির চর্চা করা হচ্ছে। ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা না বলে দলীয় লেজুড়বৃত্তির চর্চা করছে। যখন যে সরকার ক্ষমতায় ছিল তার ছাত্র সংগঠগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকত ক্যাম্পাস। থাকত না কোনো রাজনৈতিক সহাবস্থান। ক্ষমতাসীন দলগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ দিত না। তারা ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করত।
তারা আরও জানান, বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোও ছিল ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর নিয়ন্ত্রণে। নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শের বাইরে কাউকে হলে তোলা হতো না। হলের শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করাও বাধ্যতামূলক ছিল। এ ছাড়া আবাসিক হল এবং গণরুমগুলো পরিণত হয়েছিল টর্চার সেলে। পরিসংখ্যান বলছে, স্বাধীনতার পরে এ পর্যন্ত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ছাত্ররাজনীতির বলি হয়ে প্রাণ দিয়েছেন। এর মধ্যে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই নিহত হয়েছেন ৭৪ জনের বেশি শিক্ষার্থী।
সর্বশেষ গত জুনে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রথমদিকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন হলেও ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলতরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এই হামলায় তিন শতাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এরপর থেকেই সারা দেশে আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ।
আন্দোলনের একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করাসহ ৯ দফা দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। সরকার পতনের পরপরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ, দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া বিতর্কিত শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেন বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, রেজিস্ট্রারসহ পদধারীরা। অনেক ক্যাম্পাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সর্বশেষ তথ্য মতে, ঢাকা, বরিশাল, জগন্নাথ, কুমিল্লা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ, স্যার সলিমুল্লাহ, শহীদ জিয়াউর রহমান, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, ইডেন কলেজ, রাজশাহী কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ও বগুড়ার সান্তাহার সরকারি কলেজসহ দেশের ১৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ১০টি সরকারি কলেজ ও ১০টি সরকারি মেডিকেল কলেজসহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে নন বর্তমান ছাত্রনেতারা
শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের সব ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে নন বর্তমান ছাত্রনেতারা। তারা লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতিকে সংস্কার, ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান ও নিয়মিত ছাত্র সংসদ কার্যকর করার দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির যে স্বরূপ সমাজে মূর্ত হয়ে উঠেছে তা পেশিশক্তির প্রয়োগ, অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, ভিন্ন মত দমন, দখল-পীড়নের চিত্র। রাজনীতি বা ছাত্ররাজনীতির এই দানবীয় চেহারা অক্ষত বা মূর্ত রেখে রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না সেই আলাপটা বড়ই একপেশে। অধিকারের কথা বলা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের দায়দায়িত্ব গ্রহণ করার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা অর্জন করা, দেশ ও দশের স্বার্থে চিন্তা ও কাজ করা যদি রাজনীতি হয় সেটা অবশ্যই সবার করা উচিত। দীর্ঘদিন এই সকল কর্মকাণ্ড নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে করার কোনো পরিবেশ ছিল না। এই পরিবেশ যদি নিশ্চিত হয় তাহলে শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে সর্বত্র ন্যায়ের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সাংবিধানিকভাবেই শিক্ষার্থীরাও নাগরিক হিসেবে নির্বাচিত করার এবং নির্বাচিত হওয়ার অধিকার রাখে। সুতরাং রাজনীতির খোলনলচে না পাল্টিয়ে দেশের তরুণ সমাজের বিশাল অংশকে এর বাইরে রাখা ভবিষ্যতের জন্য বড়ই বিপজ্জনক হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, দেশের যেকোনো সংকটে ছাত্ররা তার ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। কথা বলা ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার আমার নাগরিক অধিকার। সেই অধিকারকে কেড়ে নেওয়া কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।
তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতির নামে সন্ত্রাস হবে না। প্রথম বর্ষ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে হলে সিট নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার পরিবেশ হবে গণতান্ত্রিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন মত-পথের ছাত্র-ছাত্রী আসবে। তাদের মধ্যে জ্ঞান আদান-প্রদান হবে। রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হবে। সেখানে ছাত্ররাই নির্ধারণ করবে তারা কোন মতাদর্শ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও মুক্ত জ্ঞান চর্চার জায়গা তৈরি করতে হবে। সকল মত ও চিন্তার যৌক্তিক প্রকাশের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলেই তা সম্ভব হবে।
ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ বলেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ কোনো যৌক্তিক সমাধান নয় বরং ছাত্ররাজনীতিতে সংস্কার আনা প্রয়োজন। সংস্কার বলতে, গত ১৫ বছর ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে নির্যাতন-নিপীড়ন, খুন করে শিক্ষার্থীদের ভীতসন্ত্রস্ত করে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। সে জায়গায় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ ও সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা। আমরা চাই নিয়মিত ছাত্র সংগঠনের নির্বাচন ও ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি নীতিমালা। নীতিমালায় উল্লেখ থাকবে, এই ছাত্র সংগঠন এই কাজটা করতে পারবে। তারা যেকোনো দাবির পক্ষে কাজ করবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দাবি আদায়ে চাপ প্রয়োগ করবে। অনৈতিক, অন্যায্য কোনো পরিবেশ যেন কোনো ছাত্র সংগঠন করতে না পারে তাও নীতিমালায় থাকবে।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের ভাবাবেগ (সেন্টিমেন্ট) ধারণ করেই রাজনীতি পরিচালিত হবে। বিগত ১৫ বছরের যে নির্যাতনের আতঙ্ক (ট্রমা) ছাত্রলীগ গেস্টরুম ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে তৈরি করেছে, সেটাকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ছাত্ররাজনীতি বলে মনে করছেন। এই ট্রমা কাটতে সময় লাগবে। ফ্যাসিস্টদের নির্মিত এই ট্রমা নিবারণে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের রাজনীতি যে ছাত্ররাজনীতি নয়, তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বুঝতে হবে। ক্যাম্পাসে ভয়মুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। আমরা চাই, রাজনীতি হবে মেধা ও শিক্ষার্থীদের চাওয়ার ভিত্তিতে।’
সাবেক ছাত্রনেতা ও শিক্ষাবিদরা যা বললেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, একসময় যে ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে ছাত্রদের ভ্যানগার্ড হয়ে থাকত সেই ছাত্ররাজনীতি এখন ক্যাম্পাসে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত দুই যুগের বেশি সময় থেকেই দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই রাজনৈতিক সহাবস্থান। যে দল যখন ক্ষমতায় ছিল তাদের ছাত্র সংগঠনের দখলে ছিল ক্যাম্পাসগুলো। ফলে সাধারণ ছাত্ররা রাজনীতিবিমুখ হয়ে উঠেছে। ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সচেতন নাগরিক সমাজও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন রাখছেন। এর মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই ছাত্ররাজনীতি বন্ধে কোনো সমাধান আসবে না উল্লেখ করে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছেÑ এটা কোনো সমাধান নয়। বরং এতে সমস্যা আরও বাড়বে। আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্ররাজনীতি কম। এটা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তবে দেশে ছাত্ররাজনীতির নামে যেটা হচ্ছে তা হলো দলীয় মাস্তান পোষা। সেটা বিএনপিও করেছে, আওয়ামী লীগও করছে। প্রকৃত ছাত্ররাজনীতি হলো যা রাজনৈতিক সচেতনতার ভিত্তিতে পরিচালনা করা হয়। এই ছাত্ররাজনীতি আগাগোড়াই ইতিবাচক। কিন্তু সেটার ওপর নানা অযাচিত হস্তক্ষেপের ফলে পচন ধরেছিল। এটাকে বাধামুক্ত করতে পারলে সৃজনশীল শক্তির প্রকাশ ঘটবে। যেটা সম্প্রতি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে।
ডাকসুর সাবেক জিএস এবং জাসদ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। বিগত সময়ে ছাত্রলীগ চরম অত্যাচার করে ছাত্রদের ভীতসন্ত্রস্ত করেছে। আবার এই ভীতসন্ত্রস্ত ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রদের সংগঠিত করে ঊনসত্তরের মতো এবারও একটি বিপ্লব সংগঠিত করেছে। বর্তমানে প্রচলিত ধারায় রাজনৈতিক সংগঠনগুলো তাদের ছাত্র সংগঠনকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করবে, এটা চলতে পারে না। কাজেই আলোচনার ভিত্তিতে ছাত্রদের অবশ্যই অধিকার রাখতে হবে সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ করার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, এই জুলাই অভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছে তাদের শুরুটা হয়েছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে। শিক্ষার্থীরা যা করেছে তার চেয়ে বড় রাজনীতি তো আর কিছু হয় না। রাজনীতি বন্ধ করতে চাওয়া মানে আসলে এই বয়সের একজন তরুণের মাথায় যে রাজনীতির ভাবনা থাকবে তা আটকে দেওয়া। দলীয় রাজনীতি বন্ধ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতি থাকা প্রয়োজন আছে। শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করবে, রাজনীতি সচেতন হবে, তবেই তারা দেশ গড়তে পারবে। ইতিহাস বলে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীরা বড় ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্রদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে লাভটা হয় স্বৈরতন্ত্রের।
দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্র বা গণতান্ত্রিক আচরণ রাতারাতি বন্ধ করা যায় না। এই আচরণ বন্ধের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আরও বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ধারা তৈরি করতে হবে। এসব করতে পারলেই আধিপত্যবাদী, দখলবাদী, নিপীড়নমূলক রাজনীতি ঠেকানো সম্ভব হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সমাজবিশ্লেষক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, অনেক দিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি হয়ে আসছে তা কিছু দিনের জন্য বন্ধ রাখা যেতে পারে। তবে তা দীর্ঘ সময়ের জন্য নয়, ছয় মাস এক বছরের জন্য। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে ছাত্ররাজনীতি অবশ্যই চালু করতে হবে। পাশাপাশি রাজনীতিতে সংস্কার আনতে হবে। ছাত্ররাজনীতির মধ্যে গণতান্ত্রিক ধারা তৈরি করতে হবে। লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করতে হবে।'
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.