প্রজন্ম ডেক্স:
এবারও দেশে চাহিদার চেয়ে ৯ লাখ বেশি কোরবানির পশু রয়েছে। এর ফলে দেশি পশুতেই কোরবানির চাহিদা মিটবে, ঘাটতির শঙ্কা নেই। এ তথ্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের। এদিকে চলমান লকডাউন বাড়বে কি না, এ নিয়েই এখন বড় দুশ্চিন্তা খামারিদের। তাঁরা বলছেন, যদি লকডাউন বাড়ে, তাহলে হাটে আনা সব গরু বিক্রি হবে কি না তার নিশ্চয়তা নেই। ফলে তাঁরা সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকে চেয়ে আছেন। দুশ্চিন্তা রয়েছে ক্রেতার জন্যও। এবার গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরুর দাম ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়বে বলে জানিয়েছেন খামার মালিকরা। ক্রেতারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই মানুষের আয় কমেছে, এর ওপর যদি গরুর দামও বাড়ে, তাহলে অনেকেই কোরবানি দিতে পারবেন না।
গত বছর করোনা বাড়তে থাকায় পশুর অস্থায়ী হাট বসবে কি না, এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ছিল সবাই। পরে শেষ মুহূর্তে হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। কোরবানির পশু জবাইয়েও ছিল জটিলতা। এ ছাড়া ঢাকায় করোনার প্রভাব বেশি থাকায় অনেকে স্বাস্থ্যঝুঁকির চিন্তাও করেছিলেন। সব মিলিয়ে অনেক খামারি হাটে গরু আনেননি। অনেক ক্রেতাও গরু কিনতে যাননি। তবে অস্থায়ী হাট শুরু হলে অনেকেই কোরবানির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এতে শুরুতে যাঁরা গরু-ছাগল বিক্রি করেছিলেন, তাঁরা লোকসানের মুখে পড়েন। আবার ঈদের আগের দিন অর্থাৎ হাটের শেষ দিকে যাঁরা বিক্রি করেছিলেন তাঁরা লাভবান হয়েছিলেন।
তবে এবার এ ধরনের কোনো জটিলতা না থাকলেও দেশে সাত দিনের কঠোর লকডাউন চলছে। যদি এই লকডাউন বাড়ে তাহলে গত বছরের পরিস্থিতিরই পুনরাবৃত্তি হবে বলে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারিরা। পশুর বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর লকডাউন না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন খামারিরা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘যদি লকডাউন বাড়ে তাহলে পশু বিক্রি নিয়ে খামারিরা অনিশ্চয়তায় পড়বেন। আর যদি লকডাউন না বাড়ে তবে গত বছরের তুলনায় বাজার অনেক ভালো হবে। কারণ গত বছর যে সমস্যাগুলো ছিল এবার তার কোনোটাই নেই। ফলে পশু বিক্রি ভালো হবে বলে আমরা অনেক আশাবাদী।’
জানা যায়, এরই মধ্যে রাজধানীতে ২২টিসহ দেশে দুই হাজার ৪০০টি কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ইজারা প্রক্রিয়া চলছে। ফলে হাট বসবে এটা নিশ্চিত। হাটে গরুবোঝাই গাড়ি যাতে নির্বিঘ্নে আসতে পারে সে জন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় খামার মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এবার যথাযথভাবে গবাদি পশু জবাই দিতে ১২ হাজার ৩৪০ জন নিয়মিত কসাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৌসুমি কসাইদের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ১৪০ জনকে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এবার ঢাকার গোপীবাগ-কমলাপুর, গোলাপবাগ, আফতাবনগর, যাত্রাবাড়ীসহ মোট ২০টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাট বসানো হবে। গাবতলী স্থায়ী হাটসহ মোট ২১টি স্থানে শুরুর হাট বসবে। এর মধ্যে দক্ষিণে রয়েছে ১৩টি এবং উত্তরে রয়েছে সাতটি। গত বছর হাটের সংখ্যা ছিল ২৪টি।
হাটের সংখ্যা কম হওয়ায় করোনার ঝুঁকিও বেশি বলে মনে করছেন অনেক খামারি। তাঁরা বলছেন, হাটের সংখ্যা কম হলে গরু ও মানুষের ঘনত্ব বেশি হবে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। হাটের সংখ্যা বেশি হলে নির্ধারিত দূরত্ব বাজায় রেখে বিক্রি করা যাবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কোরবানির প্রস্তুতি কার্যক্রম নিয়ে তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানির যোগ্য এক কোটি ১৯ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল ও ভেড়া এবং চার হাজার ৭৬৫টি উট-দুম্বা বিক্রির উপযুক্ত। গত বছর গরু-মহিষ প্রস্তুত করা হয়েছিল ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর দেশে ৯৫ লাখের মতো পশু কোরবানি হয়েছিল, যদিও প্রাক্কলন ছিল এক কোটি ১০ লাখ। বিপরীতে বাজারে আনার মতো পশুর সংখ্যা ছিল এক কোটি ১৮ লাখের কিছু বেশি। সরকারি হিসাব অনুসারে এ বছরও যদি দেশে কোরবানির পশুর চাহিদা এক কোটি ১০ লাখ ধরা হয়, তার পরও ৯ লাখ পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘গত বছরের পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এবার আরো বেশি গবাদি পশু প্রস্তুত করার পাশাপাশি তা পরিবহনে বিশেষ ব্যবস্থাপনা তৈরি করছি। আশা করি এবার দেশের গরু দিয়ে চাহিদা মিটবে।’
বিক্রেতারা আশাবাদী হলেও দুশ্চিন্তা রয়েছে ক্রেতার জন্য। এবার পশুর দাম গত বছরের তুলনায় বেশি হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। তাঁরা বলছেন, গোখাদ্যের উপকরণের আন্তর্জাতিক বাজার ছিল ব্যাপক চড়া। ফলে দেশে গোখাদ্য কিনতে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। গরু মোটাতাজাকরণে ৫০ শতাংশের বেশি লাগে এসব খাদ্য। তাই খামারিদের খরচও এবার বেশি। গরুপ্রতি এবার ৫ থেকে ১০ শতাংশ বেশি হবে। অর্থাৎ গত বছর যে গরু এক লাখ টাকায় কেনা গেছে এবার তা কিনতে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি লাগবে।
ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে দেশে ১০টির বেশি গরু রয়েছে এমন খামারের সংখ্যা ১৪ লাখ। এর মধ্যে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করে সাড়ে তিন লাখ খামারি। এর বাইরে ১০টির কম কোরবানির জন্য পশু মোটাতাজা করে এমন খামারের সংখ্যা সাত লাখের বেশি। দেশে যত গরু মোটাতাজা হয় তার ৯৫ শতাংশই ছোট আকৃতির, যার দাম ৬০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে। আর এসব গরুর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়ায় এ ধরনের গরুর চাহিদা আরো বাড়বে।
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.