সম্পাদকীয় :
চার বছরেরও বেশি সময় আগে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিতাস গ্যাসের পুরো পাইপলাইন সংস্কারের প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এখনো তা কেন বাস্তবায়িত হয়নি, এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক; বিশেষ করে সম্প্রতি রাজধানীর সিদ্দিকবাজারের একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ২১ জন নিহত ও দেড় শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পর প্রশ্নটি আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, সিদ্দিকবাজারের যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেখানে বিস্ফোরণের ধরন ও ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণটি জমে থাকা গ্যাস থেকেই হয়েছে। জানা গেছে, ভবনটিতে ‘মার্কেট’ তৈরির আগে সেখানে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল, যেখানে এখনো একটি পরিত্যক্ত গ্যাসলাইন রয়েছে।
তিতাস গ্যাসের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৬৮ সালে, সিদ্ধিরগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে। তবে আশি ও নব্বইয়ের দশকে পাইপলাইন ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি পাইপলাইন স্থাপনের আগে সেগুলোর ‘টেকনিক্যাল লাইফ’ বিবেচনা করে ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপর্মা) তৈরি করা হয়।
১৯৭০ সালে যখন এই পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছিল, তখন এর টেকিনিক্যাল লাইফ ধরা হয়েছিল ৩০-৩৫ বছর। সে হিসাবে তিতাসের ৬০ শতাংশের বেশি পাইপলাইনের বয়স ৫৫ থেকে ৬০ বছরের অধিক। এছাড়া বর্তমানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে প্রায় ৫০ হাজার সংযোগ আছে, যেগুলোর লাইন কেটে দেওয়া হলেও গ্রাহকের আঙ্গিনায় ‘রাইজার’ রয়ে গেছে। এসব সংযোগ ব্যবহার করে বেশকিছু গ্রাহক অবৈধভাবে পুনরায় গ্যাস সংযোগ নিচ্ছেন।
এমন অবৈধ সংযোগের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে; যেমন-গত বছরের ২৭ জুন রাজধানীর মগবাজারে একটি তিনতলা ভবনে থাকা অস্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন একটি গ্যাস সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন না করায় লাইন লিকেজ হয়ে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই ঘটনায় ১২ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হন।
তিতাসের পাইপলাইনে সমস্যা আছে-একথা যেমন সত্য, তেমনি এক্ষেত্রে গ্রাহকেরও দায় রয়েছে। দেশে গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণজনিত ঘটনা ইতঃপূর্বে অনেকবারই ঘটেছে এবং এতে অনেকেই হতাহত হয়েছেন। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কর্তৃপক্ষের টনক নড়া উচিত। সচেতনতা, সাবধানতা ও দায়িত্বশীল হওয়ার মাধ্যমে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হলেও হতাশাজনক হলো, ব্যবহারকারী হিসাবে আমরা যেমন সচেতন নই; তেমনি নজরদারির ক্ষেত্রেও সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর চরম উদাসীনতা ও দায়িত্বহীনতা লক্ষ করা যায়।
বস্তুত নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদানের পাশাপাশি গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তব্য হলেও গ্রাহক-সুরক্ষার ক্ষেত্রে তারা কোনোরকম ভূমিকাই রাখছে না। অথচ গ্রাহকসেবা প্রদানের নামে ঠিকই ভাগে ভাগে টাকা আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, গ্যাস ছাড়াও বিদ্যুৎ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যারা অবৈধভাবে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছেন, তারা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু ব্যক্তির সঙ্গে যোগসাজশ করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে লিপ্ত রয়েছেন। এ কারণেও দুর্ঘটনা বাড়ছে।
জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে গ্যাস ও বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা ঘটছে ৯ লাখের উপরে। দুঃখজনক হলো, এরপরও সুরক্ষা নিশ্চিতে যত্নবান হচ্ছে না সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সচেতন হচ্ছেন না ব্যবহারকারীরাও। আমরা মনে করি, সম্প্রতি রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও সিদ্দিকবাজারে ঘটা গ্যাসজনিত দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তিতাস গ্যাস কোম্পানি যেমন দায়িত্বশীল হবে, তেমনি দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন সেবা গ্রহণকারী নাগরিকরাও।
<p style="text-align: center;">সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতিঃ মোহাম্মদ আফছার খান সাদেক</p> <p style="text-align: center;">সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মিলাদ মোঃ জয়নুল ইসলাম</p> <p style="text-align: center;">প্রকাশনালয়ঃ রিপোর্টার লজ, কসবা, বিয়ানীবাজার, সিলেট ।</p> <p><hr></p> <p style="text-align: center;"><span class="x193iq5w xeuugli x13faqbe x1vvkbs x1xmvt09 x1lliihq x1s928wv xhkezso x1gmr53x x1cpjm7i x1fgarty x1943h6x xtoi2st xw06pyt x1603h9y x1u7k74 x1xlr1w8 xzsf02u x1yc453h" dir="auto"><span class="x1lliihq x6ikm8r x10wlt62 x1n2onr6 x1120s5i">বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ</span></span> উত্তর বাজার কেন্দ্রিয় মসজিদ মার্কেট (২য় তলা), বিয়ানীবাজার, সিলেট । <br>মোবাঃ ০১৮১৯-৬৫৬০৭৭, ০১৭৩৮-১১ ৬৫ ১২ ইমেইলঃagamiprojonma@gmail.com</p>
Copyright © 2025 Agami Projonmo. All rights reserved.