
এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন :: ১৯৪৭ সালের ১৪ই আাগষ্ট পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সমন্বয়ে বৃটিশ শাসন ব্যবস্থা বেরিয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং সে রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল ইসলামাবাদ। ১৫ই আগষ্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। সে রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল নয়াদিল্লী। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনক ছিলেন কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং ভারত রাষ্ট্রের জনক ছিলেন মহাত্মা গান্ধী।
মহাত্মা গান্ধীর দর্শন ছিল “ধর্ম নিরপেক্ষতা” আর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দর্শন ছিল ধর্মান্ধতা। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন “ আমার ধর্মের নির্দিষ্ট কোন ভৌগলিক সীমা রেখা নেই, আমার ধর্মের ভিত্তি হলো মানুষের ভালোবাসা আর অহিংসা” ।
পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের দূরত্ব ছিল প্রায় ১২০০ মাইল। পশ্চিম পাকিস্তানীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে শোষণ নির্যাতন এমনকি মুখের ভাষা বাংলাকে দমন নিপীড়নের আশ্রয় নেয়। তখন ধীরে ধীরে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের দূরত্ব বাড়তে শুরু করলো। প্রতিবাদী হতে শুরু করলো পূর্ব পাকিস্তানের জনগন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ভারত অখন্ড পাকিস্তানকে ভাঙ্গার রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করলো। পূর্ব পাকিস্তানকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করলো। পূর্ব পাকিস্তানের ধর্ম নিরপেক্ষ দর্শনের নেতৃত্বে আসতে শুরু করলেন ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবী তুলে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আস্থা অর্জন করতে শুরু করলেন। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধীকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার আন্দোলনের ডাক দিরেন। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুথান হলো। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্টতা লাভ করলেন অখন্ড পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলীগ।
সেদিন অখন্ড পাকিস্তানের নেতৃত্ব আওয়ামীলীগের নেতৃত্বের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নাই। পূর্ব পাকিস্তান ধীরে ধীরে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্টীর উপর ক্ষোভ , রাগ, অভিমান বাড়তে শুরু হলো। শুরু হলো ধাপে ধাপে আলোচনা, কিন্তু সব আলোচনা ব্যর্থ হলো। শুরু হলো তুমুল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ভারত তার রাজনৈতিক স্বার্থে পূর্ব পাকিস্তানের পাশে দাড়ালো। ভারত সামরিক শক্তি দিয়ে সহযোগীতা করলো। দেশ স্বাধীন হলো। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হলো পৃথিবীর মানচিত্রে।
যৌথ কমান্ডের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে স্বশস্ত্র যুদ্ধ সংগঠিত হলো। ভারত রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ভাষায় ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি এপ্লাই করলো। ভারত সফল হলো, পশ্চিম পাকিস্তান পরাজিত হলো, ভারতের কৌশলের কাছে।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ছিলেন জেনারেল এম.এ.জি ওসমান গনী এবং তাকে সহযোগীতায় ভারতে পক্ষে ছিলেন জেনারেল ওররা। কিন্তু পাকিস্তান যখন পরাজয় স্বীকার করলো অর্থাৎ সারেন্ডার করলো তখন দেখা গেল জেনারেল ওররা ও জেনারেল নিয়াজির মধ্যে সারেন্ডারের যৌথ চুক্তিনামা সম্পাদিত হলো।
আমার প্রশ্œ সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কেন অনুপস্থিত ছিলেন ?
নিশ্চয়ই বাংলাদেশে ছিলেন। জেনারেল ওসমানী ভারতের কুট কৌশলের কাছে পরাজিত হলেন। ভারত তার বীরত্ব দেখানোর জন্য সেদিন থেকেই পরোক্ষভাবে তাদেরে কলোনী রাষ্ট্রের মর্যাদায় প্রতিষ্টিত করার আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। তর্কের খাতিরে যদি বলি ভারত আমাদের সহযোগীতা করেছে। মেনেই নিলাম। তখন ভারতের মূল দর্শন ছিল ’ধর্ম নিরপেক্ষতা’। ভারত কি এখন ধর্ম নিরপেক্ষতার চরিত্র লালন করিতেছে ?
না। বর্তমান ভারত রাষ্ট্র সেকুলারিজম থেকে বেরিয়ে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সংবিধানকে অস্বীকার করিতেছে ক্ষেত্র বিশেষে।
গুজরাটে নরেন্দ্র মোদী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার নেতৃত্ব দিলেন। মুসলিম নিধন অভিযানের নেতৃত্ব দিলেন। বাবরী মসজিদের স্থলে রাম মন্দির স্থাপন করলেন বা করবেন। হিন্দুত্ববাদের শ্লোগান তুলে বা সাম্প্রদায়িকতার দোহাই দিয়ে টানা ২য় বার প্রধানমন্ত্রী হলেন। অমিত শাহ এবং মোদির নেতৃত্বে গোটা ভারত আজ অগ্নিকুন্ড। জেনসাইড বা গনহত্যা চলিতেছে গোটা ভারতবর্ষে।
রক্তের হোলি খেলায় যখন ভারতের নেতৃত্ব মরিয়া, তখন কি করে সাম্প্রদায়িক নেতা বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন তা কিন্তু বোধগম্য হচ্ছে না। নরেন্দ্র মোদীকে বলবো ৯০ ভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্রে সম্প্রীতির দোহাই তুলে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতাবার্ষিকীতে উপস্থিত না হওয়ার জন্য। কেননা আপনি বরাবরই মুসলিম বিদ্বেষী। মুসলমানের রক্তে আপনার হাত রঞ্জিত। মহাত্মা গান্ধীর দর্শন থেকে আপনি সম্পূর্ণ বিপরীত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সহযোগীতার কথা বলে আপনি হয়তো গর্ববোধ করতে পারেন। বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে ভারত রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত হওয়া মনে হচ্ছে গৌরবের তা কিন্তু নহে। জেনে রাখুন ১৯৭১ সালের ভারতের নেতৃত্ব, আর ২০২০ সালের ভারতের নেতৃত্ব এক নহে। ২০২০ সালে আমার মুসলিম ভাইদের হত্যা করে বাংলাদেশে এসে বলবেন সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশে এসেছি।
একথার উত্তরে বাংলাদেশের জনগণ আপনাকে ধিক্কার জানাবে; মুনাফিক বলবে, বেইমান বলবে, গো-মূত্র পানকারী বলবে, মদ সেবনকারী বলবে অর্থাৎ যত ধরণের নিন্দা করা দরকার বাংলাদেশের জনগণ নিন্দা জানাতে প্রস্তুত।
সুতরাং শান্তির স্বার্থে বাংলাদেশ সরকার এবং ভারত সরকার ভেবে দেখা উচিত শতবর্ষ উদযাপনে ‘প্রধান মন্ত্রী’ নরেন্দ্র মোদী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে শতবর্ষ পূর্তির মাহাত্ম কতটুকু বহাল থাকবে তা কিন্তু ভেবে দেখতে হবে সরকারকে।
লেখক: সভাপতি, সুশানের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।
সংবাদটি শেয়ার করুন।