জীবনে এই প্রথম স্বেচ্ছায় বন্ধিজীবন যাপন করছি তাও একদিন-দুদিন নয়, হয়ে গেছে ৪৮দিন। অনিশ্চিত ভবিষ্যতে কখন মুক্তি পাবো জানি না, এক আলাদা অভিজ্ঞতা অনেকেই সাজিয়ে সুন্দর করে লিখবেন। আমি চেস্টা করবো বাস্তব তূলে ধরতে। দিনটা ছিল ১৭ই মার্চ ২০২০ মঙ্গলবার, সারাটাদিন যেন কেমন করছে, আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিস্টান ‘ইস্ট এন্ড নিউজ জেনারেল স্টোর’ খোলা হয় সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা অবদি তিন ভাই, ভাতিজা ক্রমান্নয়ে থেকে চালিয়ে যাই। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতার খবর পড়ে কিছুটা ভয় পাই।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ আমরা যথাযথভাবে জাতির জনকের ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি । বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম,প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী সহ হাইকমিশনের কর্মকর্তা কর্মচারী, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের উপস্তিতি ছিল।
ওইদিন থেকেই হ্যান্ডসেইক, কোলাকুলি করা যাবেনা-সকল মানুষের একটা হাস্যরসের ব্যাপার ছিল ।
অধির অপেক্ষায় ছিলাম ১৭মার্চের । ওইদিন জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ। দুইটা কেক তৈরী করতে দিয়েছিলাম ১৭তারিখ ভোর সকালে পেয়েছিও, অনেক বৃটিশ এমপি,মন্ত্রী, মেয়র, কাউন্সিলার ১৭মার্চ উপস্তিত হবেন কেক কাঁটতে, অনুস্টান সাজানো ছিল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টা, খাবারের আয়োজনও ছিল। যখন যে নেতা বা যারা আসবেন জাতির জনকের ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যাবেন। প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম একটি প্রকাশনার। আরো ২/১দিন সময় পেলেই শেষ হতো প্রকাশনা ?
১৩ তারিখ থেকেই ফোন ই মেইল আসতে শুরু ১৭মার্চ আসতে পারবো না ? কি আর করা যায়,হাইকমিশনার বললেন এই পরিস্তিতিতে আসা সম্ভব না। কি আর করা ।
১৭মার্চ পারিবারিক ভাবে বঙ্গন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটলাম ? ১৭মার্চ দুপুরে বিগ্রেডিয়ার হামিদ ভাই ফোন করে বললেন বাসা থেকে বাহির হবেন না, কি হবে, কি হচ্ছে কেউ জানি না। উনার কথা শুনে ভয়ই পেলাম বন্ধ করেদিলাম ব্যবসা এর দু’তিনদিন পর লকডাউন ঘোষনা হয় অফিসিয়ালি ।
সেই থেকে আজ অবদি ঘরের বাহিরে পা রাখিনি আল্লাহর কি হুকুম ? এমনকি আমার ভাইয়েরা বাচ্ছারাসহ কেহ ঘরের বাহিরে যাননি-আলহামদুলিল্লাহ ।
বউয়ের তত্বাবধানে আছি? জামাতে নামাজ, তেলাওয়াৎ এক্সারসাইজ গল্প ঘুম,বই পড়া-এই নিয়ে বেশ আছি? আমি তো আমার পরিবারের হেড !! চার বাচ্ছা, বউ নিয়ে জামাতে নামাজ খুবই ভাল অভিজ্ঞতা বেশি সময় আমি ঈমামের দায়িত্ব নিতে হয় নিলাম? শুরুতেই লোকমা (ভূল পড়া) প্রথমে বিজয়, পরে আশা, পরে বড় হুজুর (বিবি) মাশাল্লাহ এক নতুন অভিজ্ঞতা । তেলাওাতে কান্না আসতো নিজের ভূলের জন্য । রাজিয়ার (বিবির) কড়া নির্দেশ কোরআন, সুরা পড়া সহীশুদ্ধ করতে হবে । সেই থেকে হুজুরের তত্বাবদানে সকাল ১০টা থেকে ১টা (যোহর) পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াৎ,আবার রাত্রে মাগরিবের পর পর তেলাওয়াৎ সকলে মিলে আমাদের বেডরুমে সুরা ইয়াসিন,সুরা মূলক,সূরা হাসর,আর রহমান আলহামদুলিল্লাহ আল্লহর শোকরিয়া আদায় করছি করোনা আর্শিবাদ হয়ে এসেছে ।
পবিত্র রমজান মাসে তারাবী জামাতে পড়ছি ইমাম সাহেব বড় ছেলে জয় ১৬বছর, শুরুতে বলেছি ইমামের বেতন ধার্য্য করতে,করলাম ১০০শত পাউন্ড । আমরা মহা আনন্দে আল্লহর রহমতে রমজান পালন করছি । খাবার দাবারের কোন চাহিদা নাই যে’টা যখন সে’টাই সকলের পছন্দ-আলহামদুলিল্লাহ ।
যাকাত, ফিৎরা,দান,উপহার.স্বজনদের সাহায্য রোজার আগেই পাটিয়ে দিয়েছি । কবুলিয়তের মালিক আল্লাহ । আরো যাচ্ছে যাবে তওফিক অনুযায়ী ।
এই দুঃস্বময়ে যারা চিরবিদায় নিয়েছেন এই জমিন থেকে আল্লাহ তাদের সকলকে জান্নাতুল ফেরদৌস র মেহমান হিসেবে কবুল করেন-আমরা তাদেরকে দোয়াতে স্মরন করবো । বিশেষ করে আমাদের ক’জন মুরব্বি জনাব আলহাজ্ব কফিল উদ্দীন সাহেব (বয়াই), খন্দকার ফরিদ উদ্দীন চাচা, সৈয়দ খান চাচাসহ ডাক্তার,নার্স, বাস ড্রাইভার বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তা,ডাক্তার,নার্স সহ সম্মুখ যুদ্ধের সকল শহীদদের । আমরা জানাজাতেও অংশগহন করতে পারি নাই বৈষ্যিক নিয়ম নিতীর জন্য ।
অনুরোধ করছি বাসায় থাকুন,নিরাপদ থাকুন-আপনি বাঁচুন,দেশ বাঁচান-পুলিশ বাঁচান,হাসপাতাল বাঁচান ? সচেতন হোন । মনে রাখবেন ”বাঁচলে খাবেন” । হায়াত,মউত,রিজিক আল্লাহর হাতে,অধৈর্য্য হবেন না,আল্লাহকে স্মরন করুন ।
-আফছার খান সাদেক, লন্ডন। (লেখাটি হুবহু প্রকাশ করা হলো)
সংবাদটি শেয়ার করুন।