প্রকাশনার ১৫ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৬ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

আলোচনায় এখন রাষ্ট্র সংস্কার

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৩:১২ অপরাহ্ণ

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

দেশজুড়ে প্রধান আলোচনা এখন রাষ্ট্র সংস্কার। অন্তর্বর্তী সরকারও রাষ্ট্র সংস্কারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছে, নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশনও গঠন করা হয়েছে। কমিশনগুলো তাদের কর্মকাঠামো (ফ্রেমওয়ার্ক) নিয়ে ভাবছে। আগামী ১ অক্টোবর কর্মকাঠামো চূড়ান্ত করে সে অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করা হবে এবং তিন মাসের মধ্যে কমিশনের সুপারিশসহ প্রতিবেদন সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হলেও দেশের ইতিহাসে বড় আকারে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ এটিই প্রথম।

এর আগে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর সংস্কার করতে ২০১০ সালে নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাইফেলসকে (বিডিআর) বিলুপ্ত করে প্রতিষ্ঠা করা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এর আগে দুর্নীতি দমন ব্যবস্থা কার্যকর করতে ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরো বিলুপ্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এ সংস্থাটির কর্মকাণ্ড অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জনগণের মধ্যে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের প্রবল দাবি ওঠে। সেই সঙ্গে সংস্কারের পক্ষে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা শুরু হয়। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক মহল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার নিশ্চিত করতে জোরালো তাগিদ দিয়েছে।

 

এ নিয়ে সম্প্রতি মার্কিন সিনেটররা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে জাতীয় নির্বাচনের আগেই রাষ্ট্র সংস্কার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

 

এ বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজও একমত পোষণ করেছে। যদিও রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার একটি জটিল ও কঠিন কাজ। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেহেতু দেশের সব পক্ষই একমত, জনগণও রাষ্ট্র সংস্কার প্রত্যাশা করেন এবং আন্তর্জাতিকভাবেও এর একটা তাগিদ আছে। ফলে বিষয়টি এখন আর অসম্ভব নয়।

 

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জনগণের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপক আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের যাত্রা শুরু হয়। এক মাস পর গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা তৈরির জন্য একটি পথরেখা ঘোষণা করেন। সেখানে তিনি দেশের সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সংস্কারে ছয়টি কমিশন ঘোষণা করেন। প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, সার্বিক সংস্কারের মাধ্যমে জাতি হিসেবে বাংলাদেশিরা নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবে এবং এর মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানের বার্তা বাস্তবায়ন, রাষ্ট্র পুনর্নির্মাণ তাগিদের ঐক্যবন্ধনে গোটা জাতিকে শক্তিশালী ও আশাবাদী করে তুলবে।

 

যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এক মাসে বন্যা মোকাবিলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, বিচার বিভাগ, প্রশাসনিক ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর মাঝে গত ১৬ বছরের দুঃখ-বেদনা জানিয়ে প্রতিকার চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, সচিবালয়, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের অনেকেই কর্মসূচি স্থগিত রেখেছেন।

 

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে বলপূর্বক অপহরণ-গুম থেকে সবার সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন সনদে স্বাক্ষর করেছে। গত ১৬ বছরে গুমের সব ঘটনা তদন্ত করতে পৃথক একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। সেই কমিশন ইতোমধ্যে তাদের কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে দেশের সর্বস্তরের মানুষ আশাবাদী হয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, গুম ও এ ধরনের ঘটনা চিরতরে বন্ধ হবে এবং বাংলাদেশ একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন।

    No feed items found.