
প্রজন্ম ডেক্স:
হেফাজতে ইসলামের ৩০ জন নেতার তালিকা প্রস্তুত করেছে গোয়েন্দারা। একাধিক সংস্থার প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করেই প্রস্তুত করা হয়েছে এ তালিকা। যদিও রোববার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত এ তালিকার ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। একজন মারা গেছেন। সে হিসাবে এখনো বাকি থাকলো আরো ২৩ জন। পর্যায়ক্রমে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হককে গ্রেপ্তারের পর যাতে করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সে জন্যই এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে তালিকার বাইরেও অনেক নেতা গ্রেপ্তার হচ্ছেন।
সূত্র বলছে, তালিকাভুক্ত নেতাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তারা কোথায় কোথায় যাচ্ছেন, কারও সঙ্গে বৈঠক করছেন কি না এমন সব খবরাখবর রাখা হচ্ছে। পর্যালোচনা করা হচ্ছে তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ। তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা কওমি মাদরাসার সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উসকে দিয়ে যে কোনো মুহূর্তে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার সক্ষমতা রাখেন। এ জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে র্যাব-পুলিশের একাধিক টিমকে। তবে উচ্চপর্যায় থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পরই তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একের পর এক তাণ্ডবের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পুলিশের সব ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই কোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা বরদাশত করা হবে না।’
তালিকায় যারা আছেন: হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক, নাসির উদ্দিন মনির, নায়েবে আমির হাবিবুর রহমান, মাওলানা আবদুর রব ইউসুফি, হাবিবুর রহমান কাশেমী, হজরত মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, নুরুল ইসলাম অলিপুরি, জাফর উল্লাহ খান, সহকারী মহাসচিব সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা জালাল উদ্দিন আহাম্মদ, মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন একরাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মীর ইদ্রিস, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনি, মাওলানা মাসউদুল করিম, অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসেন কাশেমী, আইন বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, উপদেষ্টা মুফতি মাহফুজুল হক, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুফতি হারুন ইজাহার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মাদানী। হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগরীর সহকারী সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবদুর রহমান খান, মুফতি মনির হোসেন মুন্সি, উপদেষ্টা মুফতি আবুল কালাম কাশেমী, হাফেজ আবদুল মো. হাসান, সহ-সভাপতি হজরত মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা মজিবুর রহমান হামিদী, জামিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মুফতি মো. ওয়াক্কাস, ওলামা মাশায়েখ পরিষদের যুগ্ম-সচিব ও হেফাজত নেতা মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ আনাস। এর মধ্যে সম্প্রতি মারা গেছেন মুফতি মো. ওয়াক্কাস।
সূত্র জানায়, তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের কর্মীদের মাঠে নামিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় প্রচারণার আড়ালে তারা সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছিলেন। এবার আর হেফাজতের কোনো নেতাকে ছাড় দেওয়া হবে না।
গ্রেপ্তার হয়েছেন যারা: তালিকায় থাকা সবাই ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫৩টি মামলার আসামি। তালিকায় থাকা ছয়জনকে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রোববার গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাওলানা মামুনুল হককে। ১৭ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব এবং সহকারী মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন আহম্মদ। ১৫ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি। ১১ এপ্রিল র্যাব ও গোয়েন্দা বিভাগের যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলামাবাদীকে। তাকে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের তান্ডবে পল্টন থানায় দায়ের করা পুলিশের মামলার ১৫৭ নম্বর আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যদিও বলা হয়েছে, মোদিবিরোধী নাশকতায় পরবর্তী সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ৭ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে। এর বাইরে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ১৩ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক মুফতি শরীফ উল্লাহকে ও ১৪ এপ্রিল সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ও মামলা রয়েছে। মুফতি শরীফ উল্লাহকে ২০১৩ সালের ৬ মে যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই মামলায় শরীফ উল্লাহ এজাহারনামীয় ২০ নম্বর আসামি। একইভাবে হেফাজতের সহকারী মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দিকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় করা একটি মামলায়। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী কমিটির সহ-সভাপতি মুফতি ইলিয়াসকে ১১ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাকে অবশ্য নাশকতার পরিকল্পনা, ধর্মীয় উগ্রবাদিতা ছড়ানো, ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদটি শেয়ার করুন।